একটি নির্জন দুপুর রচনা

প্রবন্ধ রচনা: একটি নির্জন দুপুর

একটি নির্জন দুপুর

ভূমিকা:

সময়ের ধারা নদীর ধারার মতোই চলমান। এ চলার শেষ নেই। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়। বিকেল ফুরোলে সন্ধ্যা নামে। রাতের কালো পর্দা সরিয়ে হাসিমুখে আসে ঊষা। তারই হাত ধরে ফের সকালের হাজিরা। এভাবে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। শতাব্দ ও সহস্রাব্দও পেছনে পড়ে থাকে, মহাকালের চাকা অবিরাম গড়িয়ে চলে। মহাকালের ওই অন্তহীন ধারায় মানুষের জীবন বুদবুদের মতন নিতান্ত ক্ষণকালের। জীবনের ঐক্ষণ অস্তিত্বের মাঝে স্মৃতির ফলকে কত ছবিই না আঁকা হয়। হিজিবিজি রেখার মাঝে দু’চারটে মোটা রেখা। সেরকমই এক মোটারিকায় চিহ্নিত হয়ে আছে এক নির্জন দুপুরের স্মৃতি।

ঘরবন্দী হওয়া ও মাঠের দৃশ্য:

বৈশাখের এক নির্জন দুপুর। মাথার উপর জ্বলন্ত সূর্য। রোধ নয় যেন আগুন। আকাশ থেকে অবিরাম ঝরছে অগ্নিতপ্ত বাতাস। বিশ্বজুড়ে মহাতাপস রুদ্রের হোমকুণ্ড জ্বলছে। তার লেলিহান শিখায় যেন আকাশ পুড়ছে। পুড়ছে মাটির বুকে তৃণলতা। সবুজের রেখা লুপ্তপ্রায়। মাটির বুক চিরে উঠছে প্রতপ্ত ধরিত্রির দীর্ঘশ্বাস। দাবদাহের প্রচন্ড দাপটে বড় বড় গাছ প্রাণনাশের আশঙ্কায় শঙ্কিত। নিশ্চল স্তব্ধ। গ্রীষ্মের এমন এক দুপুরে ঘরের মেঝে আশ্রয় নেওয়া আর সব মানুষের মতো আমিও ঘরবন্দি। আধখোলা জানালার পাশে বিছানায় আধশোয়া। চোখ ক্যামেরার মত বাইরের দৃশ্যপটে নিবন্ধ। শস্যশুন্য ধু ধু মাঠ। মেঠো পথ পুরোপুরি নির্জন। একসময় চোখে পড়ল মাঝ মাঠ থেকে উঠে আসা ঘূর্ণি বাতাসের আবর্ত। খড়কুটো ধুলোবালি নিয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে ছুটে চলেছে ক্ষ্যাপা নটরাজের মত।

অন্যান্য দৃশ্য:

মাঠের প্রান্তে ক্ষীন জল ধরা নিয়ে মৃত প্রায় নদী। ধু-ধু বালুচর। নদী ঘাটে এখন খেয়া পড়ে না। খেয়ানৌকা পড়ে আছে ঘাটের একধারে কাত হয়ে, হয়তো মেরামতের অপেক্ষায়। চাতকের ফটিক জলের বুকফাটা আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে না। গ্রামের পথও নির্জন। ঘরের আঙ্গিনা রোদে পুড়ছে। মাঝে মাঝে কানে আসছে ঘুঘুর ক্লান্ত ডাক। হাটুরেরা দুপুরের আগেই ঘরে ফিরে গেছে হাট শুন্য করে। স্কুলে-পাঠশালায় হয় সকালে ক্লাস, নয় তো ছুটি চলছে। দুপুরে সেখানেও দরজা বন্ধ।

মনের উপর প্রভাব:

নির্জন দুপুরের দৃশ্যমান জগত থেকে মন চলে যায় কল্পনার জগতে, স্বপ্নের জগতে। পাখি যেমন ডানা মেলে উড়ে যায় অন্তহীন নীলিমায় অনেকটা তেমনই যেন। মনের উধাও হয়ে যাওয়া সেই দুনিয়া যেন রূপকথার জগত। পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে দিগন্তে বিলীন হওয়ার মতন। সে যাত্রা পথের মাঝে পড়ে ধুধু তেপান্তরের মাঠ। সে মাঠ যেন বৈশাখের রৌদ্রতপ্ত ওই দৃশ্যমান মাঠ। রূপকথার ওই স্বপ্নময় জগতের মাঝে কেমন করে যেন অতীত স্মৃতির সুখ দুঃখময় কত কথাই মনের কোনে উঁকি দেয়। কত ঘটনার ছবি মনের ওপর ছায়া ফেলে চলে যায়। কত অচেনা অজানা বেদনায় মন অকারণে ব্যথিত হয়। আবার আনন্দের শিহরণে মন রোমাঞ্চিত হয়।

দুপুরের অবসান লগ্ন:

দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। তাপের প্রভাবে কিছু ভাটা পড়ে। মাঠে-ঘাটে জীবজন্তু ও মানুষজনের আনাগোনা শুরু হয়। পাখিরাও গাছের আশ্রয় ছেড়ে বাইরে এসে পাখা মেলে ধরে। ততক্ষণে কালবৈশাখীর নিরব প্রস্তুতির পর ঈশানের পুঞ্জ মেঘ অন্ধভেগে ধেয়ে আসে বাধাবন্ধহারা। পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়া সূর্যকে ঢেকে ফেলে কালবৈশাখীর মেঘপুঞ্জ। এভাবে হারিয়ে যায় দুপুরের দৃশ্যপট।

উপসংহার:

এতক্ষন স্বপ্নের মধ্যে বিভোর হয়ে থাকার যে সুখানুভূতি তা ব্যাহত হয়। স্বপ্নজাল ছিড়ে যাওয়ার ব্যথা হৃদয়কে বিদীর্ণ করে। তা সত্ত্বেও নির্জন দুপুরের স্মৃতি মন থেকে হারিয়ে যায় না। বরং থেকে যায় স্থায়িত্বের গৌরব নিয়ে। আজও দুপুরের প্রসঙ্গ এলে ওই নির্দিষ্ট নির্জন দুপুরের স্মৃতি মনের উপর সুস্পষ্ট ছায়া ফেলে যায়।

👉 সমস্ত রচনা দেখতে: Click Here

অন্যান্য রচনা:

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

বাংলার উৎসব

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন: Click Here
Subscribe Our YouTube Channel: Click Here

একটি নির্জন দুপুর রচনা

মাধ্যমিক রচনা: একটি নির্জন দুপুরের অভিজ্ঞতা রচনা

বাংলা রচনা একটি নির্জন দুপুরের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা pdf

মাধ্যমিক রচনা সাজেশন | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা pdf | উচ্চ মাধ্যমিক রচনা সাজেশন | বাংলা রচনা মাধ্যমিক সাজেশন | বাংলা রচনা |
গুরুত্বপূর্ণ বাংলা রচনা | প্রবন্ধ রচনা class 10 | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা রচনা সাজেশন

Madhyamik Bengali Suggestion

একটি নির্জন দুপুর রচনা

Leave a Comment

CLOSE