Chatrojibone Kheladhular Guruto Rochona

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা:

“All work and no play makes Jack a dull boy” — ইংরাজি এই প্রবাদটির মধ্যে ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্বটি লুকিয়ে আছে। স্বামী বিবেকানন্দ খেলাধুলাকে গীতা পাঠ অপেক্ষা শ্রেয় মনে করতেন।
ছাত্রজীবন হল ভবিষ্যতের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। কৃষক যেমন বীজ বপনের আগে আগাছা নির্মূল করে জমিকে চাষের উপযুক্ত করে নেয়, তেমনি ছাত্রমনে বিদ্যার বীজ বপনের আগে দেহকে সুস্থ ও সবল করতে হবে। খেলাধুলা হল সুস্থ-সবল দেহগঠনের একমাত্র উপায়। ছাত্রজীবনে তাই খেলাধুলা একান্ত অপরিহার্য। খেলাধুলার মাধ্যমে শুধু শরীরচর্চা নয়, পারস্পরিক সৌহার্দ্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব, নেতৃত্ব শক্তি প্রভৃতি চারিত্রিক গুণের প্রকাশ ঘটে।

খেলাধুলার গুরুত্ব:

সুস্থ জীবনের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শরীর ঠিক রাখার জন্য চাই শরীরচর্চা। উন্নত দেশে (যেমন জাপানে) কলকারখানায় কাজ শুরুর আগে এই ব্যায়ামচর্চা করা হয়। এর দ্বারা কাজে মন আসে, কর্মশক্তির বিকাশ হয়। সেজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টিফিনের সময় বা অন্য সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। সকলেই জানে স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্যবান শরীর সুখ সম্পদের অধিকারী। যারা অসুস্থ দুর্বল, রুগ্ন তারা জীবনযুদ্ধে পদে পদে পরাস্ত হয়।

বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা:

সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বে নান ধরণের খেলাধুলা প্রচলিত রয়েছে। প্রাচীন গ্রীসেও খেলাধুলাকে অগ্রাধিকার দিতে অলিম্পিক গেমসের সূচনা হয়। আধুনিক বিশ্বেও খেলাধুলার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, কাবাডি প্রভৃতি দলবদ্ধ খেলার পাশাপাশি নানা ধরণের ব্যক্তিগত খেলাও বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। ব্যায়াম, সাঁতার, দৌড়, হাইজাম্প, লং জাম্প প্রভৃতি খেলাগুলিও এখন যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

চরিত্র গঠনে খেলাধুলা:

খেলাধুলা ছাত্রদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। খেলার মাঠে পারস্পরিক সহযোগিতা, খেলাধুলায় উদার মানসিকতা, চরিত্র গঠন, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতি গুণগুলি জাগ্রত হয়। বিদ্যালয়ে ছাত্রদের পড়াশোনার একঘেমেয়ি দূরীকরণ খেলাধুলার মাধ্যমে ঘটে। খেলাধুলার মাধ্যমে একটা উদার বা স্পোর্টসম্যান স্পিরিট মনোভাব গড়ে ওঠে — যার দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন হয় সুন্দর।

জাতি গঠনে খেলাধুলা:

সুস্থ সবল জাতিগঠনে খেলাধুলা বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে। তাই জীবনের প্রাতঃকাল থেকে প্রতিটি মানুষের শরীরচর্চার জন্য খেলাধুলার আবশ্যক। খেলাধুলা করলে শরীরচর্চা ও শরীর গঠন হয়, আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রবণতার তৈরী করে। একের সংকল্প তখন মিশে যায় দলগত সংকল্পে।

জাতীয়তাবোধে খেলাধুলা:

খেলাধুলা ছাত্রদের জাতীয়তাবোধকে জাগিয়ে তোলে। খেলাধুলায় দেশের সাফল্যে দেশবাসী জাতীয়তাবোধে গর্বিত অনুভব করে। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অভিনব বিন্দ্রার স্বর্ণপদক লাভ, ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়লাভ বা টোকিও অলিম্পিক ২০২০২তে ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড ক্রিয়ায় বর্ষা নিক্ষেপনে নীরাজ চোপড়ার স্বর্ণপদক জয় দেশবাসীর জাতীয়তাবোধকে উদ্দীপ্ত করেছে। খেলায় যারা অংশগ্রহণ করে অথবা দর্শক হিসেবে যারা খেলা দেখে খেলার প্রভাব কেবল তাদের মধ্যেই সীমিত নয়, বিস্তৃত হয় জাতি ধর্ম বর্ণসম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত দেশবাসীর উপর।

আধুনিক জীবনে খেলাধুলা:

আধুনিক যুগ কৃত্রিমতার যুগ, যান্ত্রিকতার যুগ। প্রাচীনকালে মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হত। কিন্তু এখন জীবনে সর্বক্ষেত্রে যন্ত্রের অধীনে। যন্ত্রই কাজ করে মানুষ দাঁড়িয়ে বা বসে তা চালনা করে। ফলে শারীরিক পরিশ্রম হয় নিতান্ত। অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক পরিশ্রম অনেক বেশি হয়।
মানসিক পরিশ্রমের সঙ্গে সমতা রেখে শরীর চালনা না হলে বিভিন্ন ধরণের অসুখের কবলে পড়তে হয়। ক্ষুধামন্দ, অনিদ্রা, প্রভৃতি শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে ঘটে। তাই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খেলাধুলা ও শরীরচর্চা বাঞ্চনীয়। ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলায় করলে তাদের শরীর ও মন দুই ভালো থাকে। খেলাধুলা মানুষকে শক্ত সমর্থ করে তোলে। মানুষকে তার চরিত্র গঠনে সাহায্য করে জীবন যুদ্ধে জয়ী করে।

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব:

লেখাপড়া ছাত্রদের প্রধান কর্তব্য হলেও খেলাধুলার গুরুত্বও কম নয়। দেহকে সুস্থ-সবল রাখতে হলে খেলাধুলার আশ্রয় নিতেই হবে। খেলা শিক্ষার্থীর মনের মুক্তি ঘটায়। খেলাধুলার মাধ্যমে সংহতি এবং সৌভ্রাতৃত্ব মজবুত হয় এবং নেতৃত্বদানের ধারণা তৈরী হয়। দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনা না ঘটলে দেহে নানান ধরণের রোগ বাসা বাঁধে। রোগমুক্ত শরীর না হলে ভালোভাবে পড়াশোনা করা যায় না। যারা খেলাধুলা থেকে বিরত থাকে, তাদের অনেকেই বড় হয়ে স্বার্থপর এবং দৈহিক দিক থেকে দুর্বল হয়। সেই কারণে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা খেলাধুলাকে আবশ্যিক করা হয়েছে।

উপসংহার:

“অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা” — একথা সত্য হলেও শরীরচর্চা বা খেলাধুলাকে কখনোই অবহেলা করা যায় না। পড়াশোনার জন্য মনোবলের পাশাপাশি সুস্থ সবল শরীর দরকার। তাছাড়া খেলাধুলার মাধ্যমেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম ও সংহতি বোধ গড়ে ওঠে। খেলাধুলা এবং লেখাপড়াকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে পারলেই একজন ছাত্র আগামীদিনে পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারে।

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন: Click Here
Subscribe Our YouTube Channel: Click Here

মাধ্যমিক রচনা: ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

বাংলা রচনা Chatrojibone Kheladhular Guruto Rochona

মাধ্যমিক রচনা সাজেশন | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা pdf | উচ্চ মাধ্যমিক রচনা সাজেশন | বাংলা রচনা মাধ্যমিক সাজেশন | বাংলা রচনা | Chatrojibone Kheladhular Guruto Rochona
গুরুত্বপূর্ণ বাংলা রচনা | প্রবন্ধ রচনা class 10 | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা রচনা সাজেশন

Chatrojibone Kheladhular Guruto Rochona

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা

Madhyamik Bengali Suggestion

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা | ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা | খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ | ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব | ছাত্রজীবনে খেলাধুলার ভূমিকা

Leave a Comment

close

You cannot copy content of this page