নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা

প্রবন্ধ রচনা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
ভূমিকা:

পরাধীন ভারতবাসীর কাছে যার আহ্বান ছিল- “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।” তিনিই তরুণ ভারতবাসীর রক্তে স্বাধীনতার আকাঙ্খা-বীজ ছড়িয়ে দেওয়া প্রিয় নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সাহস, ত্যাগ, বীরত্ব ও দেশপ্রেমের এক নতুন ইতিহাস তিনিই সৃষ্টি করেছেন। আমরা এই নেতার উদ্দেশ্যে তাই বলি-

“মুক্তি পথের হে অগ্রদূত!
পরাধীন দেশের হে রাজদ্রোহী!
তোমাকে শত কোটি প্রণাম!”

জন্ম ও পিতৃপরিচয়:

১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি নেতাজি উড়িষ্যার কটকে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জানকীনাথ বসু ছিলেন কটক শহরের ব্যবহারজীবী। মাতা ছিলেন প্রভাবতী দেবী।

শিক্ষাজীবন:

সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। কটক শহরেই তাঁর পাঠ্য জীবনের সূচনা হয়। কটকের রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে শুরু হয় তার কলেজীয় শিক্ষা। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে দেশাত্মবোধের জাগরণ ঘটে। তাই প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরেজ শিক্ষক ওটেন সাহেব বাঙালি ও ভারতীয়দের সম্বন্ধে অপমানজনক মন্তব্য করলে সুভাষচন্দ্র তার প্রতিবাদ করেন। তাই সেখান থেকে তিনি বহিস্কৃত হন। পরে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীর অনার্স পেয়ে বি.এ. পরীক্ষায় কৃতকার্য হন।
এরপর বিলেতে গিয়ে আইসিএস পরীক্ষায় তিনি অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ইংরেজদের গোলামি ত্যাগ করে তিনি সিভিল সার্ভিস চাকরি প্রত্যাখ্যান করে দেশ মাতাকে শৃঙ্খল মুক্ত করতে দেশে ফিরে আসেন।

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:

নেতাজি সুভাষচন্দ্র যে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন তার প্রত্যেকটিতেই স্বদেশ চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- “Ideas of a Nation”, “On to Delhi:speeches and writings”, “The Indian Struggle”. তার বাংলায় লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ হল- “তরুনের স্বপ্ন”।

দেশমাতৃকার সেবায় আত্মনিয়োগ:

নেতাজির তারুণ্য, কর্মশক্তি, সংগঠনি ক্ষমতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, নেতৃত্ব দানের বিস্ময়কর ক্ষমতা সকলকে অভিভূত করে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের আহ্বানে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁর জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্ব দানের বিস্ময়কর ক্ষমতা দেখে ইংরেজ সরকার ভীত হয়ে তাকে বহুবার কারাগারে নিক্ষেপ করেন। তিনি তরুণ বয়সেই প্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন। এর ফলস্বরূপ তিনি কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হন এবং হরিপুরা ও ত্রিপুরী কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেন এবং ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন।
সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-

“বাঙালি কবি আমি, বাংলাদেশের হয়ে
তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি।”

ভারত ত্যাগ:

শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। নেতাজি আগেই কারারুদ্ধ হয়েছিলেন এবং ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য মুক্তি পেলেও তাকে অভ্যন্তরীণ রাখা হয় স্বগৃহে। কিন্তু ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে কাবুলের ছদ্মবেশে ভারত ছাড়েন।

আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন:

ইতালি ও জার্মানিতে চলে তার শক্তি সংগ্রহের চেষ্টা। অবশেষে জাপানে পৌঁছে রাসবিহারী বসুর সক্রিয় সহযোগিতায় প্রবাসী ভারতীয় ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানিদের হাতে বন্দী ভারতীয়দের নিয়ে গড়ে তোলেন ভারতের জাতীয় মুক্তি বাহিনী আজাদ হিন্দ ফৌজ। “দিল্লি চলো” -ডাক দিয়ে নেতাজির দুর্জয় বাহিনী ক্রমে বার্মা সীমান্ত অতিক্রম করে ইমফলে প্রবেশ করে। সেই প্রথম ভারত ভূমিতে ওড়ে স্বাধীন ভারতের পতাকা। দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলে ওঠেন- “Give me your blood, I will give you freedom.” কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ে নেতাজির ফৌজ আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

উপসংহার:

১৯৪৫ সালের বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয় কিনা তা রহস্যে ভরা। আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। তবুও বাঙালির শ্রেষ্ঠ বীর নেতাজির অভাব বেদনায় কাতর ভারতবাসীর অন্তর আজও বলে-
“তোমার আসন শূন্য, আজি হে বীর, পূর্ণ করো।”

Subscribe Our YouTube Channel: Click Here

Leave a Comment

CLOSE