দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

বাংলা রচনা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

ভূমিকা:

‘Dictionary of Philosophy’ গ্রন্থে বিজ্ঞান সম্পর্কে বলা হয়েছে- “Science is becoming a direct productive force of society”. বিজ্ঞান আধুনিক মানব সভ্যতায় আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ যার সাহায্যে মানুষ অসম্ভবকে অনায়াসে আয়ত্ত করেছে। সকালে নিদ্রা জাগরণ থেকে রাতে শয্যাগ্রহণ পর্যন্ত বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত চলতে পারিনা। বৈজ্ঞানিক শক্তিতে বলিয়ান মানুষ তার যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে প্রকৃতির রহস্যের আবরণ একের পর এক উন্মুক্ত করে চলেছে। এমার্শনের কথায়- “Science surpasses the old miracles of mythology.”

বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন:

বিজ্ঞান এক জাদুকরের মতো বর্তমান মানব জীবনকে আরামপ্রদ করে তুলেছে। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ছাড়া মানুষ এখন অচল। আধুনিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অনিবার্য উপস্থিতি। তাই এখন আমরা কবির ভাষায় বলতে পারি-

“সভ্যতা ধরেছে আগেই বিজ্ঞানের হাত
রাত তাই দিন হল, দিন হল রাত।”

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান:

এলার্মের শব্দে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সংবাদপত্র পাঠ করে সমগ্র দুনিয়ার খবর সংগ্রহ, গ্যাস বা স্টোভে তাড়াতাড়ি রান্না করে খাওয়া, কয়েক মাইল দূরকে বাস বা ট্রেনের মাধ্যমে হ্রাস করে অফিসে বা স্কুলে যাওয়া -এইভাবে প্রতি মুহূর্তে আমরা বিজ্ঞানের সাহায্যে জীবনটাকে উপভোগ করে চলেছি। কালি-কলম-কাগজ-মুদ্রণের নৈপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনী শক্তির নানা ইতিহাস। পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘরবাড়ি, পথঘাট, ঔষধপত্র, কৃষি-খনিজ-কলকারখানা সবই তো বিজ্ঞানের প্রযুক্তির ফসল। বিজ্ঞানই আজ নানা ভাবে আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের জন্মে বিজ্ঞান, মৃত্যুতেও বিজ্ঞান। অফিস-আদালতে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-মেল প্রভৃতি বিজ্ঞানের অবদান, যার দ্বারা দৈনন্দিন জীবনের কাজ সুচারু ও সুন্দর হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞান আজ –

“কত অজানারে জানাইলে তুমি
কত ঘরে দিলে ঠাঁই
দুরকে করেছো নিকট বন্ধু পরকে করেছ ভাই।”

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

একসময় অসুখে আক্রান্ত মানুষ বিশ্বাস করত অন্ধসংস্কার আর দৈব নির্ভরতায়। বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও আবিষ্কার সেইসব ভ্রান্ত ধারণাকে শুধু দূর করেনি, শক্তি দিয়েছে অসুখের সঙ্গে লড়াইয়ের। রোগ নির্ণয়ের নানা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে, ঔষধ ও শল্য চিকিৎসাতেও যুগান্তর এসেছে। হার্ট বা ব্রেন অপারেশন থেকে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন -সবই এখন হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানই মানুষ কে দীর্ঘজীবন দান করেছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

একদা গুহার গায়ে মনের ভাব ফুটিয়ে তুলত যে মানুষ, তাকেই বিজ্ঞান দিয়েছে শিক্ষার নানা উপকরণ। বই-চক-ডাস্টার-ব্ল্যাকবোর্ডের পরিসর থেকে বেরিয়ে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা সবই তো বিজ্ঞানের অবদান। বইয়ের পাশাপাশি এখন নানা বিষয় ভিত্তিক সফটওয়্যার শিক্ষাকে সর্বস্তরেই আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

কৃষিকাজে বিজ্ঞান:

বিজ্ঞানের কৃপায় বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লব ঘটেছে। উন্নত বীজ, কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। ফলে যে দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তর আগে আমাদের সমাজে ছিল, বিজ্ঞানের দানে তা দূরীভূত হয়েছে।

অন্যান্য ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বিজ্ঞানের প্রভাব আজ উপলব্ধি করা যায়। টুথপেস্ট থেকে শুরু করে টিভি, কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ফোনের ব্যবহার বর্তমানে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ইন্টারনেট গোটা পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। যেন বলতে হয়- “বিশ্বজোড়া ফাঁদ পেতেছে কেমনে দিই ফাঁকি।” বহুদূরে বসে থাকা প্রিয়জনের মুখ মুহূর্তেই ভেসে ওঠে স্ক্রিনে। স্কাইপের কারসাজিতে এ যেন গোষ্পদে বিলম্বিত বিশ্ব।

👉 সমস্ত রচনা দেখতে: Click Here
বিজ্ঞানের কুফল:

আধুনিক জীবনে যন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়ায় মানুষ পরিশ্রম বিমুখ হয়ে উঠেছে। শারীরিক পরিশ্রম খুব কম হওয়ায় নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আবার যন্ত্রনির্ভরতার ফলে মানুষ ক্রমশ প্রকৃতির কাছ থেকেও দূরে সরে যাচ্ছে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক যাযাবার বলেছেন- “বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।”
তাইতো কখনো কখনো বিজ্ঞান মানুষের মনে ছড়িয়েছে বিভীষিকা, আতঙ্ক। খাদ্যে ও ঔষধে ভেজাল, মারণাস্ত্রের আবিষ্কার -এসব বিজ্ঞানের ধ্বংসলীলার জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয়, মানুষ দায়ী। এজন্য জনৈক কবি বিজ্ঞানের হয়ে দুঃখ করে বলেছেন-

“বিজ্ঞান বলে দোষ কি আমার
কেন মিছে দাও গালি
প্রয়োগের গুনে সুন্দর মুখে
তোমরা মাখাও কালি।”

উপসংহার:

আজ বিজ্ঞান আমাদের জীবনে হয়ে উঠেছে প্রগতির বাহন। এই বিজ্ঞানকে মানব কল্যাণের পথে প্রতিষ্ঠা করে তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ-

“বিজ্ঞান চাই সবার মাঝে প্রাণের কথা বলতে
অন্ধ আবেগ সরিয়ে দিয়ে আলোর পথে চলতে।”

Subscribe Our YouTube Channel: Click Here

Leave a Comment

CLOSE