Class-7 History Chapter-4 Question-Answer

Class-7 History Chapter-4 Question-Answer

সপ্তম শ্রেণী
ইতিহাস
চতুর্থ অধ্যায়
দিল্লি সুলতানি: তুর্কো-আফগান শাসন
১. নীচের নামগুলির মধ্যে কোনটি বাকিগুলির সঙ্গে মিলছে না তার তলায় দাগ দাও :

(ক) ইলতুৎমিশ, রাজিয়া, ইবন বতুতা, বলবেন।
উত্তর: ইবন বতুতা

(খ) তাবরহিন্দু, সুনাম, সামনা, ঝিলাম।
উত্তর: ঝিলাম

(গ) খরাজ, খামস, জিজিয়া, আমির, জাকাত।
উত্তর: আমির

(ঘ) আহমেদনগর, বিজাপুর, গোলকোন্ডা, পাঞ্জাব,বিদর।
উত্তর: পাঞ্জাব

(ঙ) বারবোসা, মাহমুদ গাওয়ান, পেজ, নুনিজ।
উত্তর: মাহমুদ গাওয়ান

২. ‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মিলিয়ে লেখো :
ক’ স্তম্ভখ’ স্তম্ভ
খলিফাবাংলা
বলবানদুরবাশা
খলজি বিপ্লববাবর
রুমি কৌশলতুর্কান-ই চিহলগানি
রাজা গণেশইলবারি তুর্কি অভিজাতদের ক্ষমতার অবসান

উত্তর:
খলিফা —— দুরবাশা
বলবান —– তুর্কান-ই চিহলগানি
খলজি বিপ্লব —– ইলবারি তুর্কি অভিজাতদের ক্ষমতার অবসান
রুমি কৌশল —– বাবর
রাজা গণেশ —– বাংলা

৩. সংক্ষেপে (৩০-৫০ টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও:
(ক) দিল্লির সুলতানদের কখন খলিফাদের অনুমোদন দরকার হতো?

উত্তর: ইসলাম ধর্ম অনুসারে মুসলমান জগতের প্রধান ধর্ম-শাসক ছিলেন খলিফা। একজন খলিফার পক্ষে যেহেতু সমস্ত অঞ্চল শাসন করা সম্ভব হত না, তাই খলিফার থেকে অনুমোদন নিয়ে নানান অঞ্চলে নানা ব্যক্তি শাসন করতেন। যদি কোনো সম্রাট সিংহাসন আরোহণ করে শাসনকার্য পরিচালনা করতে চাইতেন, তবে তাকে খলিফার অনুমোদন পেতে হত। খলিফা যদি সেই আবেদন অনুমোদন করতেন তবেই শাসক সিংহাসনের বৈধ অধিকারী রূপে পরিগণিত হতেন। যেমন—ইলতুৎমিস কুতুবউদ্দিনের জামাই রূপে দিল্লির সিংহাসনে বসলে কেউই তাকে শাসকরূপে মেনে নিতে রাজি হয়নি । এই পরিস্থিতিতে সিংহাসনে তার বৈধতা দানের জন্য তিনি খলিফার অনুমোদন প্রার্থনা করেন। খলিফা এই প্রার্থনা মেনে নিয়ে ইলতুৎমিসকে দুরবাস ও খিলাত পাঠালেই তিনি সিংহাসনের প্রকৃত উত্তরাধিকারী হয়ে ওঠেন। এইভাবে যখন শাসন ও অধিকারের নায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠত, তখনই দিল্লির সুলতানরা খলিফার আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর অনুমোদন চাইতেন।

(খ) সুলতান ইলতুৎমিশের সামনে প্রধান তিনটি সমস্যা কী ছিল?

উত্তর: ইলতুৎমিশের (১২১১-৩৬ খ্রি.) সময়ে দিল্লি সুলতানির সামনে প্রধান তিনটি সমস্যা ছিল।
প্রথমত, কীভাবে সাম্রাজ্যের মধ্যে বিদ্রোহী শক্তিকে দমন করা যাবে?
দ্বিতীয়ত, কীভাবে মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ মোঙ্গল জাতিকে মোকাবিলা করা যাবে? এবং
তৃতীয়ত, কীভাবে সুলতানিতে একটা রাজবংশ তৈরি করা যাবে, যাতে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর উত্তরাধিকারী কোনো রকম গোলমাল ছাড়াই সিংহাসনে বসতে পারবে।
ইলতুৎমিস ক্রমাগত যুদ্ধ করে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহীদের দমন করেছিলেন। এমনকি তিনি সুকৌশলে মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিজ খাঁর আক্রমণ থেকে দিল্লি সুলতানিকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসনের যে আদর্শ স্থাপন করেছিলেন, তা সারা সুলতানি আমল পর্যন্ত বজায় ছিল।

(গ) কারা ছিল সুলতান রাজিয়ার সমর্থক? কারা ছিল তাঁর বিরোধী?

উত্তর: সুলতান রাজিয়া ইলতুৎমিশের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী ও পিতার সম্পূর্ণ সমর্থন নিয়ে সিংহাসনে বসেন। ইলতুৎমিশ রাজিয়াকে সিংহাসনের মনোনীত করেন এবং তা আমির ওমরাহদের দিয়ে অনুমোদন করিয়ে দেন। এ ছাড়া রাজিয়া সিংহাসনের অধিকারী রূপে সেনাবাহিনী, অভিজাতদের একাংশ ও দিল্লির সাধারণ লোকের সমর্থন পেয়েছিলেন।”
রাজিয়ার সিংহাসনে বসা নিয়ে তুর্কি অভিজাতদের একাংশ তীব্র বিরোধিতা করেছিল। ‘চল্লিশ চক্র’ নামে পরিচিত এই অভিজাতরা রাজতন্ত্রকে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে চাইলে রাজিয়ার সাথে বিরোধ বাধে। রাজিয়ার পুরুষসুলভ আচরণ ধর্মীয় উলেমারা ভালো চোখে দেখেননি। এ ছাড়া রাজপুত শক্তি ও তাঁর শাসনের বিরোধিতা করে। সিংহাসনে বসার মাত্র সাড়ে তিন বছরে তাঁর মৃত্যু হয়।

(ঘ) আলাউদ্দিন খলজি কীভাবে মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন?

উত্তর: খলজি বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক আলাউদ্দিন খলজির (১২৯৬-১৩১৬ খ্রি.) শাসনকালে মোঙ্গল আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ১২৯৭ থেকে ১৩০৭ সালের মধ্যে পাঁচ-ছয় বার মোঙ্গলরা ভারত আক্রমণ করে, যার প্রভাব দিল্লির সিংহাসনের ওপর পড়ে। এই বারংবার মোঙ্গল আক্রমণ থেকে দিল্লি সুলতানিকে রক্ষা করতে আলাউদ্দিন কঠোরভাবে বহু মোঙ্গল সেনাদের বন্দি করেন ও তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেন। তবে শুধু সামরিক প্রতিরোধ করেই তিনি চুপ থাকেননি। ভবিষ্যতে মোঙ্গল আক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে তিনি কয়েকটি দুর্গ নির্মাণ করেন ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন।

(ঙ) ইলিয়াসশাহী ও হোসেনশাহী আমলে বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় দাও?

উত্তর: বাংলার সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ইলিয়াসশাহি ও হুসেনশাহি বংশের অবদান অনস্বীকার্য। এই যুগে সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রভূত উন্নতি। এ প্রসঙ্গে কৃত্তিবাসের ‘রামায়ণ’, মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃয় বিজয়’ ইত্যাদির উল্লেখ করা যায়। চণ্ডীদাস হলেন এ যুগের শ্রেষ্ঠ ও অবিস্মরণীয় কবি। তিনি ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের রচয়িতা। ইলিয়াসশাহি শাসকদের উৎসাহে এই আমলে অনেক মাদ্রাসা, স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠে। হুসেনশাহি আমলে বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে অন্যতম ছিল ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনরুত্থান ও চৈতন্যদেবের আবির্ভাব। এ ছাড়া এই আমলে শৈবধর্ম, সুফীধর্ম ও অন্যান্য আঞ্চলিক ধর্ম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে হুসেনশাহি আমলে হস্তলিখন’ শিল্প খুবই উৎকর্ষতা লাভ করে।

৪. বিশদে (১০০-১২০ টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও:
ক) পাঠ্যপুস্তকের পৃষ্ঠা নং ৪৮-এর ৪.২ মানচিত্র দেখো। মানচিত্র থেকে আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য অভিযানের বিবরণ দাও।

উত্তর: আলাউদ্দিনের মতো যুদ্ধপ্রিয় ও সাম্রাজ্যবাদী সম্রাট দিল্লির সিংহাসনে খুব কমই বসেছিলেন। আলেকজান্ডারের মতো তিনিও বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতেন। আলাউদ্দিনের রাজ্যবিস্তারের নীতিকে দুটি সুস্পষ্ট পর্যায়ে বিভক্ত করা যায় -(ক) উত্তর ভারতে রাজ্য বিস্তার, (খ) দক্ষিণ ভারতে রাজ্য বিস্তার।
উত্তর ভারত বিজয় সম্পন্ন করে আলাউদ্দিন খলজি দাক্ষিণাত্য অভিযানে মনোনিবেশ করেন। অবশ্য উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিকে সরাসরি সুলতানি সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূত করলেও দক্ষিণ ভারতে তার সমরাভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আনুগত্য লাভ ও কর সংগ্রহ। মানচিত্র থেকে আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্যের অভিযানের যে চিত্র পাই তাতে এই সময়ে দক্ষিণ ভারতে চারটি সমৃদ্ধ রাজ্য ছিল, যথা— দেবগিরি, বরাল, হোয়সল ও পাণ্ডা। ১৩০৬ খ্রি. সেনাপতি মালিক কাফুরের নেতৃত্বে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী দক্ষিণ ভারতে প্রেরণ করেন। মালিক কাফুরের নেতৃত্বে এই বিশাল সৈন্যবাহিনী একে একে দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র, বরলালের রাজা প্রতাপরুদ্র, হোয়সল রাজ্য পান্ডশাসকদের পরাজিত করে দ্বারসমুদ্র, তাঞ্জোর, মাদুরাই প্রভৃতি এলাকার ওপর ক্ষমতা দখল করে।
কিন্তু আলাউদ্দিন দক্ষিণী রাজ্যগুলি সরাসরি সুলতানি শাসনের অন্তর্ভুক্ত করেননি। এদের থেকে কর গ্রহণের মধ্যেই সুলতান সন্তুষ্ট থাকেন। কেননা তিনি উপলব্ধি করেন যে, উত্তরভারত থেকে সুদূর দাক্ষিণাত্যের ওপর শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভবপর নয়।

(খ) দিল্লির সুলতানদের সঙ্গে তাঁদের অভিজাতদের কেমন সম্বন্ধ ছিল তা লেখো।

উত্তর: সুলতানি যুগে সবচেয়ে প্রভাবশালী সামাজিক গোষ্ঠী হল অভিজাত। সুলতানি প্রশাসনে অভিজাতদের বিশেষত মুসলমান অভিজাতদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। দিল্লির সুলতানরা উপলব্ধি করেছিলেন যে, তাদের সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে অতি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য একদল প্রশাসক প্রয়োজন। তাই অভিজাতদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে সুলতানরা সাম্রাজ্যকে দৃঢ়তা প্রদান করেছিলেন। সুলতানি শাসনের প্রথম দিকে কেবলমাত্র বহিরাগত মুসলমানরাই অভিজাত হিসেবে মর্যাদা ও কর্তৃত্ব ভোগ করতেন। অভিজাতদের এই সময় রাজনৈতিক উচ্চপদে নিয়োগ করা হয়। অভিজাতরা ক্ষমতাচ্যুত হলেও সামাজিক মর্যাদা হারাত না। সুলতানরা বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় অভিজাতদের হাতি ও ঘোড়া উপহার দিতেন।
কাজের ভিত্তিতে অভিজাতদের দুভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম দলে ছিল মূলত সামরিক কাজের সাথে যুক্ত অভিজাতরা। দ্বিতীয় শ্রেণির অভিজাতরা অধিকাংশই ছিল ধর্মতত্ত্ববিদ, যারা বিচার বিভাগের দায়িত্বে ছিল। সুলতানি আমলে অভিজাতরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। তবে তারা সুলতানের অবাধ্য হলে সুলতান তাদের কঠোর হস্তে দমন করতেন।

(গ) ইকতা কী? কেন সুলতানরা ইকতা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন?

উত্তর: সুলতানি আমলে সমগ্র সাম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করা হয়। সে সময় সামরিক নেতাদের মধ্যে বেতন রূপে এক একটি প্রদেশ দেওয়া হত। এই প্রদেশগুলিকেই বলা হত ‘ইকতা’। যিনি এই ইকতার দায়িত্ব পেতেন তিনি ইকতাদার বা মুক্তি নামে পরিচিত হতেন এবং ওই ইকতা অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায় করতেন। এ ছাড়া সৈন্যবাহিনীর দেখা শোনা, বাড়তি রাজস্ব সুলতানদের দেওয়া ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পালনের কাজ করতেন ইকতাদাররা। তাতে সমগ্র ইকতা ব্যবস্থা সুলতানের নিয়ন্ত্রণে থাকত।
ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রকৃতির অনুদানের ওপর অর্থাৎ কৃষকদের উৎপাদনের উদ্‌বৃত্ত অংশের একাংশ রাষ্ট্রের বলে বিবেচিত হত। এই ইসলামীয় সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের সাথে সাথে কৃষকদের উৎপাদনের উদ্‌বৃত্তের অংশ সংগ্রহ করা ও তা শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে বণ্টন করার পদ্ধতি উদ্ভাবনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। এই ধরনের একটি পদ্ধতি হল ইকতা। সদ্য সৃষ্ট সুলতানির শাসনের দৃঢ়তা প্রদানের কথা মাথায় রেখে সুলতানরা এই ইকতা ব্যবস্থা চালু করেন। দিল্লির সুলতানরা (ক) সদ্য অধিকৃত অঞ্চলগুলির ওপর কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা এবং অধিকৃত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ওপর সুলতানি নিয়ন্ত্রণের প্রসার ঘটানো এবং (খ) ভাগ্যান্বেষী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী তুর্কি সেনানায়কদের প্রশাসনিক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রেখে তাদের সর্বোচ্চ সেবা আদায় করে নেওয়া এই দুটি জরুরি প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে তুর্কি সেনানায়কদের ইকতা’ বিতরণের মাধ্যমে ইকতা ব্যবস্থা চালু করেন।

(ঘ) আলাউদ্দিনের সময় দিল্লির বাজার দর নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তোমার মতামত লেখো।

উত্তর: যে-কোনো শাসনব্যবস্থা সুদৃঢ়করণের জন্য একটি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। তেমনি আলাউদ্দিনের অর্থনৈতিক সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা। তার অর্থনৈতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাজার দর নিয়ন্ত্রণ।
তবে আলাউদ্দিনের বাজার দর নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক পরস্পর বিরোধী মতামত আমরা লক্ষ করি। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন অল্প বেতনে সৈন্য পোষণ করাই ছিল আলাউদ্দিনের বাজার দর নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য। অনেকে মনে করেন দক্ষিণভারত থেকে লুণ্ঠিত ধনরত্ন দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলে বিতরণ করার ফলে সাম্রাজ্যে অর্থনৈতিক কাঠামো বেসামাল হয়ে পড়ে। এই অর্থনৈতিক সংকট মোচনের জন্যই তিনি বাজার দর নিয়ন্ত্রণে প্রয়াসী হন।
আলাউদ্দিন বাজারের সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য, বস্তু, ঘোড়া, গবাদি পশু ইত্যাদি মূল্য স্থির করে দেন। বাজারদর তদারকির জন্য শাহানা-ই-মাণ্ডি ও দেওয়ান ই-বিরাসৎ নামে কর্মচারী নিয়োগ করেন। সম্রাটের ঠিক করে দেওয়া দামের থেকে বেশি দাম নিলে বা ক্রেতাকে ওজনে ঠকালে কঠোর শাস্তি দেওয়া হত। এইসব বর্ণনা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে আলাউদ্দিন তাঁর সমগ্র বাজার দর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে এক সুষ্ঠু পরিকাঠামোর মধ্যে বেঁধে রেখেছিলেন, যা তার সাম্রাজ্যকে দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছিল।
তবে আলাউদ্দিনের বাজার দর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হওয়ায় সমগ্র সাম্রাজ্যের জনসাধারণ এতে উপকৃত হননি। এমনকি ব্যবসায়ীদের লভ্যাংশ কমে যাওয়ায় ব্যাবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দিয়েছিল। এতদ্‌সত্ত্বেও আমরা বলতে পারি যে আলাউদ্দিনের এই বাজার দর নিয়ন্ত্রণ যুগ অপেক্ষা অনেক অগ্রবর্তী ছিল এমনকি সমগ্র ব্যবস্থাটিকে সুষ্ঠভাবে পরিচালিত করার জন্য তাকে জনসাধারণের সামনে মান্যতা দান করেছিল যা তার সাম্রাজ্যকে দৃঢ়তা প্রদান করেছিল।

(ঙ) বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির মধ্যে সংঘর্ষকে তুমি কি একটি ধর্মীয় লড়াই বলবে? তোমার যুক্তি দাও।

উত্তর: বিজয়নগর রাজ্যের উত্তর দিকে মুসলমান শাসিত বাহমনি রাজ্যগুলি ছিল বিজয়নগরের সব থেকে বড়ো প্রতিদ্বন্দ্বী। মুসলমান শাসিত এই দাক্ষিণাত্যের বাহমনি রাজ্যের সাথে হিন্দু শাসিত বিজয়নগর রাজ্যের সংঘাত ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি। সাধারণভাবে বলা যায় যে, হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনের ধারা হিসেবে বিজয়নগর রাজ্য মুসলমান শাসিত দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির বিনাশসাধনে উন্মুখ ছিল। আবার দাক্ষিণাত্যের সুলতান শাসকদের হিন্দু বিদ্বেষ অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা ছিল না। এই দিক থেকে লক্ষ করে আমরা বিজয়নগর দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির সংঘর্ষকে ধর্মীয় লড়াই বলতে পারি।
কিন্তু শুধুমাত্র ধর্মীয় বিদ্বেষ এই দুটি দক্ষিণী রাজ্যের দীর্ঘ সংঘাতের মূল কারণ ছিল না। এই সংঘর্ষের আপাত লক্ষ্য ছিল দাক্ষিণাত্যে রাজনৈতিক প্রাধান্য অর্জন করা। তবে সেই লক্ষ্য গভীর প্রয়োজনবোধ দ্বারা চালিত হয়েছিল। তুঙ্গভদ্রার উপকূলবর্তী দোয়াব অঞ্চল, কৃয়া-গোদাবরী ব-দ্বীপ ও মারাঠা রাজ্য—এই তিনটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের ওপর আধিপত্য স্থাপনের সাথে অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন জড়িত ছিল। কেননা এই সব অঞ্চলের উর্বর জমি ও বাণিজ্যের প্রভাব ছিল। বেশি।
তাই এই সংঘাত প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় সংঘাত রূপে শুরু হলেও তা শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক সংঘাতে পরিণত হয়। তাই একে অর্থনৈতিক সংঘাত বলাই বেশি যুক্তিসঙ্গত। কেননা এটি ধর্মীয় সংঘাত হলে কোনো অর্থনৈতিক সম্পন্ন অঞ্চলকে নিয়ে সংঘর্ষ বাধত না।

☛ সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর পেতে: Click Here
আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করো: Click Here
সমস্ত বিষয়ের উত্তর পেতে: Click Here

Class-7 History Chapter-4 Question-Answer

Class 7 History Important Questions and Answers

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের প্রশ্নগুলির উত্তর

Class-7 History Chapter-4 Question-Answer Class-7 History Chapter-4 Question-Answer Class-7 History Chapter-4 Question-Answer

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের অনুশীলনীর প্রশ্ন উত্তর
দিল্লি সুলতানি: তুর্কো-আফগান শাসন প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment