আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রচনা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

ভূমিকা:

না, আমরা কোনদিন ভুলতে পারবো না। যারা আমাদের মাতৃভাষা ও মাতৃমুক্তির জন্য স্বৈরাচারী নিষ্ঠুর শাসকের বন্দুক-কামান – বেইনেটকে উপেক্ষা করে অকাতরে মুক্তির মন্দির সোপানতলে প্রাণ ত্যাগ করেছেন, তাদের অসীম অবদানের কথা আমরা কোনদিন ভুলতে পারবো না। মাতৃভাষার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষাত্রে অমর ভাষাশহীদদের সুমহান কীর্তি ইতিহাসের রক্তাক্ত উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। যতদিন বাংলা থাকবে, বাংলার মাটি থাকবে, মা তার সন্তানকে লালনপালন করবে, বাংলার আকাশে সূর্যের উদয়-অস্ত থাকবে, ততদিন মাতৃভাষাশহীদদের মহান ত্যাগের কথা বাংলার ঘরে ঘরে ধ্বনিত হবে।

মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস:

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের নাগপাশ থেকে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছিল দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে। একটি ভারত এবং অন্যটি পাকিস্তান। ধর্মীয় সাদৃশ্য অজুহাতে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানেরও রাষ্ট্রভাষায় রূপে প্রচলনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ আলী জিন্না। বাংলাভাষী পূর্ববঙ্গের জনগণ এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের নির্মম গুলিতে নিহত হন আব্দুল, বরকত ,সালাম ও রফিক। বাংলাদেশ সহ সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের আগুন। প্রধানমন্ত্রী জিন্না তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। বঙ্গবাসীর মাতৃভাষা বাংলা স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত হয়।

সমস্ত রচনা দেখতে: Click Here
ভাষা- আন্দোলনের ঐতিহাসিক মহিমা:

মাতৃভাষার জন্য বরকত- সালাম- রফিকের আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তান সরকারের নাগপাশ থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। দু- দশকেরও বেশি সময় ধরে নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বিনিময়ে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সহযোগিতায় এবং মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে স্বাধীন সূর্য উদিত হয়। এইখানেই মাতৃভাষা দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য। প্রথমে মাতৃভাষার মুক্তি, পরে মাতৃভূমি মুক্তি।
তাই ভাষাশহীদদের উদ্দেশ্যে আমাদের নিবেদন-

উনিশ সো বাহান্নর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সব গৌরবে মহেশ্বরী

বৃহত্তর অর্থে মাতৃভাষাদিবস:

ক্যালেন্ডার ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে মাতৃভাষা দিবসের কথা উল্লেখ আছে। বর্তমানে আমাদের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারির অর্থ মাতৃভাষাদিবস, ভাষাশহীদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং মাতৃভাষার জন্য শপথের দিন। রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ঐদিন প্রতিটি রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিক আপন মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে।

উপসংহার:

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাতৃভাষাকে মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই উপমা অত্যন্ত স্বার্থক। কেননা, মাতৃভাষা ব্যতীত কোন মানুষের শিক্ষাদীক্ষা, আত্মপ্রকাশ ও আত্মপ্রতিষ্ঠা একেবারেই অসম্ভব। এই তা পর্যায় ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষাাত্রে বিবিধ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বিশেষ করে বঙ্গভূমিতে প্রভাতফেরি, আলোচনাসভা ও বিতর্কসভার আয়োজন করা হয়। আমাদের মধ্যে মতাদর্শগত যত ই পার্থক্যই থাক, মাতৃভাষার ক্ষেত্রে আমরা সকলেই সহমত পোষণ করে একত্রে উদারত্রকণ্ঠে উচ্চারণ করতে পারি- বিনে স্বদেশীভাষা, মিটে কি আশা?

Subscribe Our YouTube Channel: Click Here
CLOSE