বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল প্রবন্ধ রচনা

প্রবন্ধ রচনা বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল

বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল

ভূমিকা:

আলোকোজ্জ্বল প্রদীপের নিচে দেখা যায় মানব সভ্যতার ধ্বংসের বীজ। আজ বিষ বৃক্ষে রুপান্তরিত হয়েছে মানব সভ্যতার প্রাঙ্গণে। একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে স্বর্গ- মর্তের প্রভেদ ঘুচে গেছে। একদিকে নবতম সৃজন, অন্যদিকে ধ্বংস। কিন্তু আমরা জানি সভ্যতা যন্ত্র, বিজ্ঞান যন্ত্রী। সভ্যতার এই সুধা সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে মানুষ জাগ্রত করেছে ঊষর মরুতে প্রাণের সবুজ স্পন্দন। তবুও ক্ষণেক্ষণে মানুষের কোমল মনে প্রশ্ন জাগে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ।

বিজ্ঞান কি:

বিজ্ঞান হল বিশেষ জ্ঞান। কোন বিষয়বস্তু বা ঘটনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানা। বিজ্ঞানের কল্যাণী হাতের স্পর্শ মানব জীবনে পরশপাথরের মত। এই বিজ্ঞানরূপ পরশপাথর মানুষের দূরকে করেছে নিকট বন্ধু, পরকে করেছে ভাই। গুহায় বসবাসকারী মানুষ আজ রয়েছে গগনচুম্বি অট্টালিকায়। সমুদ্রের অতলের রত্ন সামগ্রী মানুষের প্রসাধন, অপষ্ট নীহারিকার মায়াজাল ছিন্নভিন্ন করে বিজ্ঞান আজ মানব সভ্যতার আকাশে সূর্য ওঠার মত স্বাভাবিক। মানব জীবনের অগ্রগতির প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুভব করি বিজ্ঞানের আশীর্বাদধন্য হাতের স্পর্শ।

বিজ্ঞানের সুফল:

বিজ্ঞান দুই হাত উজার করে সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে। কৃষিতে সবুজ বিপ্লব, শিক্ষাই অগ্রগতি ও শিল্পে ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। চিকিৎসায় নববিপ্লবের ফলে মুমূর্ষ রোগী দীর্ঘজীবন লাভ করেছে, দেশে নেই খাদ্যাভাব। যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষ পৃথিবীতে পেয়েছে হাতের মুঠোয়, পাড়ি দিয়েছে চাঁদে, মঙ্গলগ্রহে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষ বিজ্ঞানের আশীর্বাদপুষ্ট। এমনকি করোনা মহামারীকালে মানুষ মানুষের থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়লেও দৈনিন্দন রুটিরুজির সহায় হয়ে থেকে গিয়েছিল বিজ্ঞানেই।

বিজ্ঞানের কুফল:

বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অনেক কিন্তু কেড়ে নিয়েছে তার সুকুমার বৃত্তি গুলিকে, মানুষকে অনেকাংশে করে তুলেছে অনুভূতিহীন। মানুষ আজ যন্ত্রমানব। অপরের দুঃখে হয় না ব্যথিত, নেই হার্দিক সম্পর্ক। বিজ্ঞানের অপব্যবহারের ফলস্বরূপ সভ্যতা আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। সবুজ বনভূমিকে বিনষ্ট করার মানসিকতায় মেতে উঠেছে মানুষ, মাতামাতি করছে পারমাণবিক বোমা নিয়ে। সভ্যতার নিরন্তর অগ্রগতি, মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছে বেপরোয়াভাবে। যা প্রকৃতির স্বাভাবিকতা ও সৌন্দর্য নষ্ট করেছে।

শুভচেতনার উদয় হোক:

কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে এই ধ্বংসলীলার জন্য মানবিক কাঠগড়ায় কাকে দাঁড় করাবো। পারমাণবিক শক্তি ভান্ডারের জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয়। মানব সভ্যতা তিল তিল করে আজ তিলোত্তমা, যাকে রক্ষা করার দায়-দায়িত্ব মানুষেরই হাতে।

উপসংহার:

বিজ্ঞানের দায়িত্বজ্ঞানহীন অপব্যবহারের দ্বারা তাকে অকল্যাণকর অভিশাপে পর্যবসিত করব নাকি? যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়ে তাকে আশীর্বাদ স্বরূপ করে তুলব, সে সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে।

প্রবন্ধ রচনা: মোবাইলের সুফল ও কুফল

CLOSE