Class-8 Bengali Question-Answer পল্লীসমাজ

Class-8 Bengali Question-Answer পল্লীসমাজ

এখানে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ‘পল্লীসমাজ‘ গদ্যের প্রশ্নগুলির উত্তর আলোচনা করা হলো। আশাকরি এইগুলি ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়ক হবে।

শ্রেণী: অষ্টম বিষয়: বাংলা
পল্লীসমাজ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
পাঠ্য পুস্তকের প্রশ্নগুলির উত্তর:

১.১ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর: দেবদাস ও চরিত্রহীন।

১.২ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোটো গল্পের নাম লেখো।
উত্তর: মহেশ ও অভাগীর স্বর্গ।

২. নীচের প্রশ্নগুলির দু-একটি বাক্যে উত্তর লেখো:

২.১ গোপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ কী করছিল?
উত্তর: গোপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ জমিদারির হিসাব দেখাশোনা করছিল।

২.২ গ্রামের একমাত্র ভরসা কী ছিল?
উত্তর: একশো বিঘার মাঠটাই ছিল গ্রামের একমাত্র ভরসা।

২.৩ ‘বোধ করি এই কথাই হইতেছিল’– কোন কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর: একশো বিঘা মাঠের দক্ষিণ ধারে যে বাঁধ রয়েছে তা কেটে জল বার করে দেওয়ার জন্য গ্রামের সমস্ত চাষীদের প্রার্থনার কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

২.৪ রমা আকবরকে কোথায় পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল?
উত্তর: রমা আকবরকে একশো বিঘা মাঠের দক্ষিণ ধারের বাঁধ পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল।

২.৫ ‘পারবি না কেন?’ — উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কোন কাজটি করতে পারবে না?
উত্তর: বেণী ঘোষাল যখন উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ আকবরকে রমেশের লাঠির আঘাতে আহত হওয়ার কথা জানিয়ে রমেশের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে নালিশ করতে বলে তখন আকবর বলে এটা সে করতে পারবে না।

৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো:

৩.১ কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল কেন?


উত্তর: গ্রামের একমাত্র ভরসা একশো বিঘার মাঠ যেখানে সমস্ত চাষিদের কিছু জমি ছিল তা জলে ডুবে গিয়েছিল। জল বার করতে না পারলে সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শুধুমাত্র মাঠের দক্ষিণ ধারের ঘোষাল ও মুখুজ্জেদের বাঁধটা কেটে ওই জল বার করা সম্ভব ছিল। কিন্তু ওই বাঁধের গায়ে জলার মতো আছে যাতে মাছ চাষ হয় বলে জমিদার বেণীবাবু বাঁধ কাটতে দিতে রাজি নন। তাঁর কাছে চাষিরা সকাল থেকে প্রার্থনা করেও কোনো ফল পাননি। তাই তারা রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল।

৩.২ রমেশ বেণীর কাছে জল বার করে দেবার হুকুম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল কেন?


উত্তর: দু দিনের টানা বৃষ্টিতে গ্রামের একমাত্র ভরসা একশো বিঘা মাঠে জলে ডুবে গিয়েছিল। জমির জমা জল বার করতে না পারলে জমির সমস্ত ধান পচে যাবে। চাষীরা সারাবছর না খেতে পেয়ে মরবে। আর ওই জমা জল একমাত্র মাঠের দক্ষিণ পাশে থাকা বাঁধ কেটে বার করা সম্ভব। ওই বাঁধটি তিনজনের অধিকারভুক্ত ছিল। রমেশ ভেবেছিল, প্রজার দুরাবস্থার কথা ভেবে রমা নিশ্চয়ই আপত্তি করবে না। আর অপর অংশীদার বেণীবাবু তো রমেশের বড়দা। তাই প্রজাদের চরম ক্ষতির কথা চিন্তা করে রমেশ বেণীবাবুর কাছে বাঁধ কেটে জল বার করতে দেওয়ার অনুরোধ করেছিল।

৩.৩ বেণী জল বার করতে চায়নি কেন?


উত্তর: বেণী জল বার করতে চায়নি কারণ-
(i) বাঁধ কেটে জলার ওপর দিয়ে জল বার করতে দিলে জলার মাছ সব বেরিয়ে যাবে। এর ফলে তাদের প্রায় দু-তিনশো টাকার ক্ষতি হবে।
(ii) জল বার করতে না দিলে চাষিদের সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যাবে। তখন চাষিরা বাধ্য হয়ে বেণীবাবুদের কাছে জমি বন্ধক রেখে দেবে এবং ফলস্বরূপ তাদের জমিদারি বাড়বে।

৩.৪ ‘ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখমুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল’- রমেশের এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?


উত্তর: গ্রামবাসীদের ফসল রক্ষার উদ্দেশ্যে জমা জল বার করার জন্য জলার বাঁধ কাটার প্রস্তাব নিয়ে রমেশ বেণীর কাছে আসে এবং চাষিদের দুরাবস্থার কথা জানায়। কিন্তু বেণী দু-তিনশো টাকার মাছের লোকসানের কথা বলে বাঁধ কাটার অনুমতি দিতে রাজি হয়নি। বরং জমিদারের সর্বগ্রাসী স্বার্থের কথা ভেবে রমেশকেও চুব থাকতে বলে এবং উত্তেজিত রমেশকে জমিদারি বাড়ানোর কৌশল সম্পর্কে জানায়। রমেশ তখন জমিদার বেণী ঘোষালের এক চরম স্বার্থপর, লোভী ও নীচ মানসিকতার পরিচয় পায় এবং ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

৩.৫ ‘রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল’- রমেশের বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?


উত্তর: রমেশ প্রজাদের ধান জমি রক্ষার জন্য বাঁধ কেটে জল বের করার ব্যাপারে বেণী ঘােষালের কাছে অনুরােধ করেও ব্যর্থ হয়। রমেশের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, রমা তার সঙ্গে সহমত পােষণ করবেই। তাই সে জলার তৃতীয় শরিক রমার কাছে যাওয়া স্থির করে। সে ভাবে, রমা রাজি হলে একা বেণীর আপত্তিতে কোনাে কাজ হবে না। কিন্তু রমাকে বিষয়টি জানাতেই সে প্রথমে মাছের বন্দোবস্তের কথা জিজ্ঞাসা করে। রমেশ তখন অত জলে মাছের বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয় এবং এই সামান্য ক্ষতিটুকুকে মেনে নিতে অনুরােধ জানালে রমা সােজাসুজি জানিয়ে দেয়, অতগুলাে টাকা সে লােকসান করতে পারবে না। রমার এই অপ্রত্যাশিত উত্তরে আর সেই সঙ্গে রমার অমানবিক, স্বার্থপর মনােভাবের পরিচয় পেয়ে সেইসঙ্গে নিজের ভাবনার চরম বৈপরীত্য উপলদ্ধি করে রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেল।

৩.৬ রমা রমেশের অনুরোধে রাজি হয়নি কেন?

উত্তর: রমেশের অনুরােধে রমা রাজি হয়নি কারণ, জলার জায়গাটি ছিল তাদের তিনজনের অধিকারভুক্ত। বেণী ঘােষাল এ-ব্যাপারে অনুমতি দেননি। তা ছাড়া জল বের করতে দিলে জলাশয়ের মাছ সমস্ত বেরিয়ে যাবে, যার ক্ষতির পরিমাণ বছরে দুশাে টাকা। শুধুমাত্র প্রজাদের উপকারের জন্য এই ক্ষতি সে করতে চায়নি। সর্বোপরি, সম্পত্তি তার নয়, সম্পত্তি তার ভাইয়ের। সে শুধু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে। সুতরাং, অনুমতি দেওয়ার সে কেউনয়। এই জন্য সে রমেশের অনুরােধে রাজি হয়নি।

৩.৭ ‘মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে’- কে, কার সম্পর্কে একথা বলেছিল? সে কেন একথা বলেছিল?

উত্তর: আলােচ্য উক্তিটি রমেশ, রমার সম্পর্কে করেছিল।
► প্রজাদের সমূহ ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রমেশ প্রথমে বেণী ঘােষালের কাছে যায়। সেখান থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হাজির হয় রমার কাছে। তার বিশ্বাস ছিল, রমা অবশ্যই তার সঙ্গে সহমত হয়ে বাঁধ কাটার অনুমতি দেবে। এই ত্যাগ স্বীকারে তাদের হয়তাে কিছুটা ক্ষতি হবে, কিন্তু দরিদ্র প্রজাদের কথা ভেবে এটুকু ক্ষতি রমা নিশ্চয়ই মেনে নেবে। কিন্তু রমাকে অনুরােধ করতে এসে রমার মনের বৈপরীত্যের পরিচয় পায় রমেশ রমেশের কাছে টাকার দাবি করে রমা বলে, প্রজাদের হয়ে সে-ই তাে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে। রমার এমন হীন মনের পরিচয় পেয়ে রমেশ বিহ্বল হয়ে পড়ে। রমার সম্পর্কে এতকাল পােষণ করা ধারণা ভেঙে যাওয়ায় রমেশ আলােচ্য উক্তিটি করেছে।

৩.৮ ‘রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল’ – রমার এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?

উত্তর: রমেশ বাল্যপরিচিত রমাকে উদার মনের বলেই ভাবত। তাই গ্রামবাসীদের দুরবস্থার কথা বলে বাঁধ কাটার অনুমতি চাইতে গিয়েছিল। কিন্তু রমেশের মতাে রমা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ প্রজাদরদি হয়ে বাঁধ কাটতে রাজি হয়নি। নিজের ক্ষতি মেনে না নিয়ে রমা রমেশকেই প্রজাদের হয়ে দু’শাে টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলে। আর তাতে চরম অপমানিত বােধ করে রমেশ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়। ক্ষিপ্ত রমেশ রমাকে নিষ্ঠুর, নীচ ও ছােটো বলে অপমান করে। রমেশ আরও বলে মানুষের দয়ার ওপর জুলুম করার মতাে ঘৃণ্য পাপে সে দোষী। নিজের সম্পর্কে রমেশের মুখে এই মূল্যায়ন শুনে রমার এমন অবস্থা হয়েছিল।

৩.৯ রমা আকবরকে ডেকে এনেছিল কেন?

উত্তর: বাঁধ কেটে জল বের করার ব্যাপার নিয়ে রমার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত রমেশ রমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, সে একাই বাঁধ কেটে জল বের করে দেবে। পারলে তারা আটকানাের চেষ্টা করতে পারে। রমা এতে খুব অপমানিত বােধ করে। সে বুঝেছিল, রমেশ এরপর সাংঘাতিক আশ্চর্য ঘটাতে পারে। তাই সে দেখতে চেয়েছিল, একটা হিন্দুস্থানি চাকরের জোরে রমেশ কীভাবে বাঁধ কেটে জল বের করে। তাই বাধ পাহারা দেবার জন্য সে তাদের পিরপুরের প্রজা লাঠিয়াল আকবরকে ডেকে এনেছিল।

৩.১০ ‘মোরা নালিশ করতি পারব না’ -কে একথা বলেছে? সে নালিশ করতে পারবে না কেন?

উত্তর: রমাদের পিরপুরের প্রজা আকবর এ কথা বলেছে।
► আকবর একজন প্রকৃত লাঠিয়াল। তার আত্মসম্মানবােধ প্রবল। সে জানে লাঠিতে জয়-পরাজয় আছেই। রমেশের লাঠির আঘাতে সে আহত হয়, তার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরে, কিন্তু পাঁচখানা গাঁয়ের লােক তাকে সর্দার বলে মানে। তাই পরাজিত হলেও সে আত্মমর্যাদা হারাতে রাজি নয়। নালিশ করলে তার সম্মানহানি ঘটবে সে সর্দার হিসেবে অপমানিত হবে। তাছাড়া সর্দারের এই কথায় ছােটোবাবু রমেশের প্রতি শ্রদ্ধাও পরিস্ফুট হয় কারণ রমেশ নিজের স্বার্থে নয়, গ্রামবাসীদের স্বার্থে একশাে বিঘা জমি বাঁচাতে বাঁধ কাটার কাজে তাদের বিরুদ্ধে লাঠি ধরেছে তাই কোনােভাবে সে সদরে গিয়ে তার চোট দেখাতে পারবে না বা থানায় গিয়ে মিথ্যা অভিযােগও জানাতে পারবে না ।

৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:

৪.১ ‘নইলে আর ব্যাটাদের ছোটোলোক বলেচে কেন?’ -বক্তা কে? এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার চরিত্রের কী পরিচয় পাও?

উত্তর: আলােচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন বেণী ঘােষাল।
► প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কয়েকটি বিশেষ দিক ফুটে উঠেছে। বক্তা অর্থাৎ, বেণী ঘােষাল মূলত প্রজাপীড়ক জমিদার। তিনি একাধারে জমিদার ও মহাজন। মহাজনী করে তিনি জমিদারির সীমানা বাড়িয়েছেন এবং পরের প্রজন্মের জন্যে কৌশল করে আরও বেশি সম্পদ বাড়ানাের পরিকল্পনা করেছেন। মূলত প্রশ্নোক্ত কথাটির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের লােভী, পরশ্রীকাতর ও নিন্দুক জাতীয় বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে।

৪.২ বেণী, রমা ও রমেশ – চরিত্র তিনটির তুলনামূলক আলোচনা করো। সেইসঙ্গে এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কোন চরিত্রটি তোমার সবথেকে ভালো লেগেছে এবং কেন তা জানাও।

উত্তর: বেণী , রমা ও রমেশ এই তিনটি চরিত্রই পল্লিসমাজের জমিদারের প্রতিভূ। তবে তিনজনই আলাদা মানসিকতার পরিচয় দেন।
► বেণী: বেণী ঘোষাল তৎকালীন গ্রাম্য লোভী, অরথপিপাসু, কুটিল জমিদার চরিত্রের আদর্শ নিদর্শন। চাষিদের বিপদে সে শুধু নি চেষ্ট থাকে তাই নয়, বরং তাদের বিপদ থেকে নিজে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় সেই কুটিল বুদ্ধিও তার রয়েছে। চাষিদের চরম দুর্দশার কথা জেনেও সে শুধু যে বাঁধ কাটতেই অস্বীকার করে তাই নয় বরং গরিব চাষিদের ছোটলোকের বাচ্ছা বলেও অপমান করে। তার মতে চাষিরা দুর্দশাগ্রস্ত হলে তবেই তারা জমিদারের কথা মেনে চলবে এবং জমিদারের কাছে ধার ও ঋণের দায়ে সব সমর্পণ করবে, কারন তারা নির্বোধ ছোটলোক।
► রমা: রমা পরিস্থিতির স্বীকার , ঝগড়াবিমুখ , শান্তিপ্রিয় জমিদারি শরীক। সে একজন নারী, তাই জমিদারিতে তার লিখিত অর্ধেক ভাগ থাকলেও সে নিজেকে তার ছোট ভাইয়ের অবিভাবক মনে করে। ভাইয়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য সে নিজের লাভের ভাগ ছাড়তে চায় না, এবং বেনীর সাথে বিবাদও করতে চায় না। তারমধ্যে অভিমানী নারীর দেখা মেলে আবার রমেশের নির্ভীক লড়াই তার চোখে মুগ্ধতার অশ্রু নিয়ে আসে।
► রমেশ: রমেশের চরিত্রটি আমার সব থেকে ভাল লেগেছে. রমেশ একজন জমিদার হওয়া সত্ত্বেও সে গরিব চাষিদের ভরসার পাত্র। সে যেমন দয়ালু তেমন সাহসী। একশো বিঘা জমির ফসল বাঁচানোর জন্য সে বেনী ও রমাকে অনেক অনুরোধ করে, কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় গাঁয়ের জোরে বাঁধ কেটে ফেলতেও সে পিছপা হয়নি। বেণীর কুটিলতা ও রমার টাকার প্রতি মায়া তাকে রাগিয়ে তোলে। সব মিলিয়ে বলা যায় মানুষের প্রতি করুনা ও দয়া ও অন্যায়ের সাহসের সাথে প্রতিবাদ করার নির্ভীকতার মিশেলে তৈরী রমেশ এক উজ্জ্বল চরিত্রের উদাহরন।

► এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে রমেশ চরিত্রটি আমার সবচেয়ে ভালাে লেগেছে। কারণ, তাঁর চরিত্রের মধ্যে মহৎ আদর্শ, সুদৃঢ়তা, সত্যনিষ্ঠা ও বিরাট মানবিকতার আশ্চর্য সমাবেশ লক্ষ করা যায়। তার বলিষ্ঠ বাহু এবং প্রশস্ত বক্ষ বাংলাদেশের জীর্ণ দুর্বল সংস্কারা পল্লিসমাজের সেবায় উৎসর্গীকৃত ছিল। তাই তার চরিত্রটি আমার ভালাে লাগে। 

৪.৩ উপন্যাসের নামে পাঠ্যাংশটির নামকরণও ‘পল্লীসমাজ’ রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নামকরণটি সুপ্রযুক্ত কিনা সে সম্পর্কে মতামত জানাও।

উত্তর: নামকরণের মধ্য দিয়ে সাহিত্যের ভাববস্তুর আভাস পাওয়া যায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাস থেকে গৃহীত ‘পল্লীসমাজ’ নামক পাঠ্যাংশে তৎকালীন গ্রাম্য সমাজই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। বেণী, রমা, রমেশ প্রভৃতি চরিত্র মিশিয়ে গদ্যের কাহিনী আবর্তিত হলেও পল্লীসমাজের প্রেক্ষাপটে ও প্রভাবে সবকিছু পরিচালিত হয়েছে। অন্যান্য উপন্যাস বা গল্পে সমাজের ভূমিকা থাকলেও তা প্রাধান্য লাভ করে না। কিন্তু পল্লীসমাজে সমাজই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। উপন্যাসের যে নির্বাচিত অংশ আমাদের পাঠ্যাংশ হিসেবে গৃহীত হয়েছে সেখানেও আমরা স্বল্প পরিসরে গ্রাম্য পরিবেশ, সেখানকার সমস্যা, জমিদারদের আচরণ, রাজনীতি সবকিছুর প্রকাশ দেখতে পাই। তাই আলোচ্য ‘পল্লীসমাজ’ নামকরণটি যথোপযুক্ত ও সার্থক।

৪.৪ পল্লীসমাজ পাঠ্যাংশে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো নিদর্শন পেয়ে থাকলে সে সম্পর্কে আলোচনা করো। এ ধরণের ব্যবস্থার সুফল ও কুফল সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: ‘পল্লীসমাজ’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সমাজসমালােচনামূলক উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম। এই রচনায় সমকালীন বাংলাদেশের ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার নিদর্শন পাওয়া যায়। হিন্দু সমাজের প্রকৃত আদর্শ ও মনােভাব এবং সমগ্র জীবনযাত্রার একটি নিখুঁত চিত্র এই উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে। ‘পল্লীসমাজ’ গদ্যাংশে বেণী ঘােষাল চরিত্রের মধ্যে দিয়ে লেখক দেখিয়েছ, জমিদাররা কীভাবে প্রজাদের সর্বস্বান্ত করতেন এবং কীভাবে তাঁরা তাঁদের জমির পরিধি বাড়াতেন। জমিদার বেণী ঘােষাল চরিত্রের মধ্যেই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার নিদর্শন পাওয়া যায়।
► সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার আপত কোনাে সুফল আছে বলে মনে হয় না। একথা ঠিক, প্রজাপীড়ক জমিদারের পাশাপাশি অনেক সময় প্রজাদরদি সামন্তও থাকতেন। তাঁরা প্রজাদের মঙ্গলার্থে নানান হিতকর পরিকল্পনা নিতেন। একই সঙ্গে প্রজাদের সার্বিক স্বার্থরক্ষাই ছিল তাঁর প্রধান কাজ। এমন জমিদারের অধীনে প্রজারা সুখে-শান্তিতে জীবন কাটত।
► সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষক-সহ সমস্ত প্রজাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। তারা ফসল উৎপন্ন করেও একবেলা পেটপুরে খেতে পারত না। জমিদারের সীমাহীন লােভ, লালসা, বিলাসিতার শিকার হয়ে তাদের সর্বস্ব হারাতে হত। নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখতে যে কোনাে প্রজার চরম সর্বনাশ দ্বিধা করত না।

৫. সন্ধি করো:


বৃষ্ + তি = বৃষ্টি
সম্ + বরণ = সংবরণ
কাঁদ + না = কান্না
অতি + অন্ত = অত্যন্ত
অন্ + আত্মীয় = অনাত্মীয়
এক + অন্ত = একান্ত।

৬. নীচের শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করো:


নিরুত্তর = নিঃ + উত্তর
নমস্কার = নমঃ + কার
তারকেশ্বর = তারক + ঈশ্বর
যথার্থ = যথা + অর্থ
প্রত্যাখ্যান = প্রতি + আখ্যান
আশ্চর্য = আঃ + চর্য
তদবস্থা = তৎ + অবস্থা।

৭. নীচে দেওয়া শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ কর :

অপরাহ্ন = অ – প – রান্ – হ, [ মুক্তদল —অ, প, হ (৩টি), রুদ্ধদল—রান্ (১টি) ]

অকস্মাৎ = অ -কস্ – মাৎ, [মুক্তদল —অ (১টি), রুদ্ধদল—কস, মাৎ (২ টি) ]

আহ্বান = আ – হ – বান্ [মুক্তদল —আ, হ (২ টি),রুদ্ধদল-বান্ (১টি) ]

দক্ষিণ = দক্ – ক্ষিণ, [মুক্তদল (০), রুদ্ধদল দক, ক্ষিণ (২ টি) ]

উচ্ছিষ্ট = উচ – ছিষ – ট, [মুক্তদল—ট ১টি, রুদ্ধদল—উচ, ছিষ (২ টি) ]

উত্তপ্ত = উৎ – তপ্ -ত, [মুক্তদল —ত (১টি), রুদ্ধদল-উৎ, তপ (২ টি) ]

বিস্ফারিত = বিস্ – ফা – রি – ত, [মুক্তদল-ফা, রি, ত (৩টি), রুদ্ধদল—বি (১টি) ]

দীর্ঘশ্বাস = দীর – ঘ-স্বাস, [মুকদল—ঘ (১টি), রুদ্ধদল—দীর, শ্বাস (২ টি)]।

অশ্রুপ্লাবিত = অশ – রু – প্লা – বি ত (মুক্তদল —রু, বি, ত (৩টি), রুদ্ধদল-অশ, প্লা (২টি)]

হিন্দুস্থানি = হিন – দুস্ – থা – নি [মুক্তদল —থা, নি (২ টি), রুদ্ধদল-হিন, দুস (২ টি) ]

অস্বচ্ছ = অ-স্বচ্- ছ (মুক্তদল —অ, ছ (২ টি), রুদ্ধদল—স্বচ (১টি) ]

৮. নীচে দেওয়া ব্যাসবাক্যগুলিকে সমাসবদ্ধ পদে পরিণত করা। কোনটি কী ধরনের সমাস তা নির্ণয় কর :

৮.১ জল ও কাদা = জলকাদা (দ্বন্দ্ব সমাস)

৮.২ নয় আহত = অনাহত (নঞ-তৎপুরুষ সমাস)

৮.৩ ত্রি অধিক দশ = ত্রয়োদশ (মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস)

৮.৪ বেগের সহিত বর্তমান = সবেগে (সহার্থক বহুব্রীহি সমাস)

৮.৫ মড়ার জন্য কান্না = মড়াকান্না (নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস)

৮.৬ চণ্ডী পুজোর জন্য তৈরি যে মণ্ডপ = চণ্ডীমণ্ডপ (মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস)

৯. নীচের বাক্যগুলিকে নির্দেশ অনুযায়ী পরিবর্তন কর:

৯.১ কথাটা রমেশ বুঝিতে পারিল না। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: কথাটা রমেশ শুনিল কিন্তু বুঝিতে পারিল না।

৯.২ এ বাড়িতে আসিয়া যখন প্রবেশ করিল তখন সন্ধ্যা হয় হয়। (সরল বাক্যে)
উত্তর: সন্ধ্যা হতে না হতেই এ বাড়িতে আসিয়া প্রবেশ করিল।

৯.৩ ওরা যাবে কি ? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর: ওরা যাবে কিনা সেটাই জিজ্ঞাস্য।

৯.৪ বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিবারও তাহার প্রবৃত্তি হইল না। (হা-বাচক বাক্যে)
উত্তর: বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে সে বিরত রইল।

৯.৫ তুমি নীচ, অতি ছোটো। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: তুমি নীচ এবং অতি ছোটো।

৯.৬ পথে আর এতটুকু কাদা পাবার জো নেই দিদিমা। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর: পথে কি আর এতটুকু কাদা পাবার জো আছে দিদিমা?

৯.৭ মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ থাকায় এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: যেহেতু মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ ছিলেন সেহেতু এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই।

১০. নীচে দেওয়া শব্দদুটিকে দুটি আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্যরচনা করাে :

যাত্রা (পালাগান শোনা): গ্রামগঞ্জে আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে যাত্রা হতো।
যাত্রা (এবারের মত) : নিমাই এর হৃদ রোগ হয়েছিল কিন্তু সঠিক চিকিৎসা পেয়ে সে এ যাত্রায় বেঁচে গেলো।

বাঁধ (বন্ধন যুক্ত) : বস্তাগুলি ভালো করে না বাঁধলে পরে যাবে।
বাঁধ (পাড়) : বর্ষাকালে নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।

👉 অষ্টম শ্রেণী বাংলা পাঠ্যপুস্তকের সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নগুলির উত্তর: Click Here

You may also like: Class-8 Unit Test Question Papers

পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের রমা চরিত্রটি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করো।
পল্লী সমাজ প্রশ্ন উত্তর mcq
Pallisomaj Question Answer
পল্লীসমাজ উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো উত্তর
কোন অনুষ্ঠানের কথা দিয়ে ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের সূচনা?
পল্লীসমাজ উপন্যাসে ডাক্তারের নাম কী ?
পল্লীসমাজ উপন্যাসের অবলম্বনে রমেশের চরিত্র আলোচনা কর
Class-8 Bengali Important Question Answer
পল্লীসমাজ উপন্যাস অবলম্বনে রমেশ চরিত্রটি আলোচনা করো৷
পল্লীসমাজ উপন্যাসের প্রকাশকাল

Class-8 Bengali Question-Answer পল্লীসমাজ

Official Website: Click Here

অষ্টম শ্রেণীর প্রথম ইউনিট টেস্টের বাংলা বিষয়ের প্রশ্নপত্র

Leave a Comment

CLOSE