প্রবন্ধ রচনা বাংলার ঋতুচক্র
বাংলার ঋতুচক্র
ভূমিকা:
সেই দেশটি হলো বাংলাদেশ। আমাদের জন্মভূমি তথা মাতৃভূমি। এই বাংলাদেশ ঋতু বৈচিত্র্য স্বতন্ত্র ও সমুজল। মানুষ প্রকৃতির সন্তান হওয়ায় তাদের জীবনে প্রাকৃতিক ঘটনাবলী প্রভাব ফেলতে বাধ্য। আজকের আধুনিক জীবনযাপনেও প্রকৃতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আজকের যান্ত্রিক জীবনে মুক্ত প্রকৃতির রূপ ও বৈচিত্রের আসাদ গ্রহণ গ্রহণ করতে মানুষ ব্যাকুল।
বাংলার ঋতুবৈচিত্র:
প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা ছয়টি ঋতুর দ্বারা বছরকে ভাগ করেছেন। প্রত্যেকটি ঋতুই তার আপন আপন বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র। ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যর কোনোটিতেই বাংলার ছয়টি ঋতুর সাড়ম্বর উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায় না। ঋতুচক্র বাংলার প্রকৃতিতে চিরপুরাতনের মধ্যেই চির নতুনের আস্বাদন নিয়ে আসে। দুমাস অন্তর বাঙালির জীবনে ঋতুচক্র নিয়ে আসে অপার বৈচিত্র আস্বাদ। বাঙালির অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে ঋতুর আবর্তনের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। গ্রীষ্ম বাংলা তাপদগ্ধ হয়ে পড়ে। যদিও আম, জাম ,লিচু ,কাঁঠাল গ্রীষ্মের দাবদাহুকে ভুলিয়ে দেয়। আসে বর্ষা তার অকৃপণ বারিধরা আমাদের শস্যভান্ডার পরিপূর্ণ করে দেয়। বাংলার তৃতীয় ঋতু হলো শরৎ এই সময় আকাশে থাকে পেজা তুলোর মত মেঘ। আকাশ হয় ঘননীল। বাঙালি মেতে ওঠে শারদ উৎসবে। তাই কবিও বলে ওঠেন- শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি।
শীতের আগে আসে বাংলার নিজস্ব হেমন্ত ঋতু। কুয়াশা আর ঝরা পাতার খেলা মিলে হেমন্ত এক নতুন অনুভূতির সঞ্চার করে। আর তারপর আসে শীত। শীত বাঙালির উৎসবের ঋতু। শীতে হয় পৌষ পার্বণ সহ নানা মেলা। বাঙালির চতুর্দশ পার্বণ বইমেলাও এই শীতকালেই বসে। ঋতুচক্রের শেষ ঋতু টি হল বসন্ত। ধূসর শীতের অবসান ঘটিয়ে প্রকৃতি নানা বর্ণে সেজে ওঠে। শিমুল, পলাশ ,কৃষ্ণচূড়ার সাজে নবরূপে সঞ্চিত হয় বঙ্গপ্রকৃতি। বাংলার ঋতুচক্র কোন ধরাবাধা পটচিত্র নয়। আসলে ঋতুচক্র প্রতিবছর বাঙালির জীবনকে দিয়ে যায় নতুন সজ্জীবনী মন্ত্র। করে তোলে কবিত্বময়। অবশ্য ঋতু বৈচিত্র্য আনন্দের পাশাপাশি দুঃখের কারণও ঘটায়। গ্রীষ্ম প্রখর হয়ে উঠলে খরার প্রাদুর্ভাব আর বর্ষার অবিরাম ধারা বন্যার প্রকোপ ঘটায়। শীতের প্রাবল্য দিন দুঃখী দরিদ্র মানুষকে কাতর করে।
সমস্ত রচনা দেখতে: Click Here
উপসংহার:
জীবনে সুখ দুঃখ- দুই থাকে। দুঃখকে অতিক্রম করে সুখের প্রতিষ্ঠা হল ঋতুচক্রের এক অন্তর্নিহিত বার্তা। যা বারবার বাঙালির জীবনে আসার আলো নিয়ে আসে। ঋতুচক্রের কল্যাণে সৌন্দর্যময় আমাদের এই বাংলাদেশে ঋতু পরিবর্তন ঘটে এবং বঙ্গজীবন নবজীবনের স্পর্শে জেগে ওঠে নবীন আনন্দে। রূপে, বৈচিত্র ,প্রাণ ময়তায় ও তার বাংলার উৎসব ঋতু আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়।