বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা ৪০০ শব্দে

আমরা বিজ্ঞান ও কুসংস্কার সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা ৪০০ শব্দে লিখে দিলাম।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা


“যে জাতি জীবন হারা অচল অসাড়
পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।”
—-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা:

মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তি দিয়েই প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করেছে; নানান প্রতিকূলতাকে জয় করে লক্ষ্যে পৌঁছেছে, বিচারবোধ, বুদ্ধি, সংগ্রাম করার মানসিকতায় জীবজগতের কাছে সাফল্য এনে দিয়েছে। আজ মানুষ সভ্যতার গর্বে গর্বিত, তবে এসবের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞান।

কুসংস্কার কী?

কুসংস্কার হল মানুষের যুক্তি বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস, মিথ্যা ধারণা। ইংরেজিতে একে বলে Superstition, যা বহুদিন ধরে চলে আসছে। এমন অন্ধবিশ্বাস মানুষের অজ্ঞতার কারণে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের যুগেও মানুষ তন্ত্র-মন্ত্র, ঝাড়ফুঁক করে ভুত-প্রেত, ডাইনি, জিন ইত্যাদির ভয়ে মরে।

কুসংস্কারের উৎপত্তি:

আদিম মানুষ পাহাড়ে-জঙ্গলে বাস করত তখন বিজ্ঞানের জন্ম হয়নি। মানুষ সেই সময় অতিপ্রাকৃত সত্তাই বিশ্বাসী ছিল। যেকোনো প্রাকৃতিক ক্রিয়াকান্ডের কারণ ও উৎস সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় এসবের মূলে অপদেবতারা ক্রিয়াশীল। সেকালের মানুষের মনে দৃঢ়বদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভুত-প্রেত প্রভৃতি অশরীরী আত্মার কারসাজি রয়েছে বলে নিরক্ষর বিজ্ঞানচেতনাহীন মানুষ বিশ্বাস করত। এভাবেই কুসংস্কারের উদ্ভব ও প্রসার ঘটে।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা:

আদিম মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখল সেদিনই পরোক্ষ তাদের অজান্তেই বিজ্ঞানের জন্ম হল। মানুষ নানান ধাতুর ব্যবহার শিখল। প্রয়োজনের তাগিদে নিত্যনতুন জিনিস আবিষ্কার করল, শুরু হল গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিজ্ঞানের দৌলতে আবিষ্কার হল নানান রোগের ঔষধ। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান একে একে স্থান করে নিল।

“কত অজানের জানাইলে তুমি
কত ঘরে দিলে ঠাঁই
দূরকে করিলে নিকট বন্ধু
পরকে করিলে ভাই।”
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কুসংস্কারের স্বরূপ:

কুসংস্কার ধর্মকে আশ্রয় করে বিকশিত হয়েছে, যেমন- গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন, বলিদান প্রথা, দেবতাদের স্বপ্নাদেশ, মানুষের মধ্যে দেবদেবীর ভর করা, বিশিষ্ট গাছকে বৃক্ষ দেবতা জ্ঞানে পূজা করা, ভন্ড সাধু সন্ন্যাসীর প্রতিবিশ্বাস বা গ্রহ রত্ন ধারণ, জ্যোতির্বিদ্যায় আস্থা, এছাড়াও নানান কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস মানুষের চেতনায়স্তরকে প্রভাবিত করেছে। আবার ধর্মীয়প্রভাব মুক্ত কুসংস্কার রয়েছে, যেমন- জোড়া শালিক দেখা, যাত্রাকালে পিছু ডাকা, বিড়ালের রাস্তা দিয়ে আড়াআড়িভাবে যাওয়া কিংবা এক চক্ষু দর্শনে অমঙ্গল ইত্যাদি কুসংস্কারও মানব জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন কুসংস্কারের উৎস সম্পর্কে বলেন- “It is this undefined source of fear and hope which is the genesis irrational Superstition.”

“নূতন সত্য আবিষ্কারের করিবার জন্য সমস্ত জীব ও সাধনার আদর্শক।”
— জগদীশচন্দ্র বোস

ফলাফল:

কুসংস্কারের ফলে ব্যক্তিগত জীবনে ও পারিবারিক জীবনে অনেক ক্ষতি স্বীকার করতে হয় ফলে ভন্ড সাধুসন্ন্যাসী, জ্যোতিষী, ওঝা, তান্ত্রিকদের দ্বারা মানুষ নিত্য প্রবঞ্চিত হচ্ছে। রোগ নিরাময়ের জন্য তুকতাক, জলপড়া পুজো-আচ্ছা, ওঝা-বৈদ্য ইত্যাদিতে নির্ভর করে রোগীর মৃত্যু ঘটে যায়।

কুসংস্কার দূরীকরণের উপায়:

কুসংস্কারের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার প্রসার ও বিজ্ঞান চেতনার বিস্তার। বিজ্ঞানই হল কুসংস্কারের বিনাশকারী। যেখানে নিরক্ষতা সেখানেই ধর্মন্ধতা, অন্ধবিশ্বাস সেখানেই কুসংস্কারের রাজত্ব। নিরক্ষতা দূরীকরণের পাশাপাশি বিজ্ঞানচেতনা বাড়াতে হবে, যুক্তি দিয়ে কুসংস্কারের অসাড়তা মানুষকে বোঝাতে হবে।

“বিপদ থাকে তো থাকে, তাই বলিয়া বিকাশের পথকে একেবারে পরিত্যাগ করিয়া চলিলে মঙ্গল নাই।”
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উপসংহার:

কুসংস্কার দূরীকরণে কাজ নিঃসন্দেহে কঠিন ও শ্রমসাপেক্ষ। তবু বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার দূর করার প্রধান অস্ত্র। যুক্তিবাদী সংস্থাগুলিকে বিজ্ঞান ক্লাবকে এবং ছাত্র সমাজকে একাজে এগিয়ে আসতে হবে। ক্রমাগত আঘাত হানতে হবে কুসংস্কারের উপর। আত্মবিশ্বাস প্রগাঢ়যুক্তি ও বিজ্ঞানমনস্কতা কুসস্কার দূরীকরণে একমাত্র পথ।

“বিজ্ঞানই বর্তমান জগতের উন্নতির মাপকাঠি, বিজ্ঞানের অগ্রগতিতেই সভ্যতার অগ্রগতি।”
— আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।

👉 সমস্ত রচনা দেখতে: Click Here
মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন: Click Here
Subscribe Our YouTube Channel: Click Here

মাধ্যমিক রচনা: বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

CLOSE