প্রবন্ধ রচনা বাংলার মেলা // গ্রাম বাংলার মেলা // বাংলার মেলা অনুচ্ছেদ
বাংলার মেলা
ভূমিকা:
মেলা বাঙালি সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। এই মেলা কথাটি এসেছে সকলের মিলনস্থল থেকে। বাঙালির জীবনে উৎসবের শেষ নেই, বারো মাসে তার তেরো পার্বণ। কতগুলি মেলা হয় ধর্মীয় পুজো পার্বণকে কেন্দ্র করে, আবার কতগুলি হয় ঋতুকেন্দ্রিক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়- মেলা ভারতের পল্লীর সার্বজনীন উৎসব। কোন উৎসব প্রাঙ্গনের মুক্ত অঙ্গনে সকল গ্রামবাসীর মনের উচ্ছসিত মিলন স্থান হল মেলা। মেলা উপলক্ষে দূর দূরান্তের মানুষ এসে একত্রে মিলিত হয়। এই মিলনের মধ্যে দিয়ে তাদের অন্তরাত্মার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটে। এই কারণে মিলিত হয়ে ব্যাক্তিহৃদয় যেমন বৃহৎ ও মহৎ হয়ে ওঠে এবং মিলনের মধ্যে দিয়ে ব্যাক্তি সম্পূর্ণতা লাভ করে।
বাংলার বিভিন্ন মেলা:
বাংলার বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে এত মেলা অনুষ্ঠিত হয় যে, তা এই ছোট নিবন্ধের মধ্যে দিয়ে বলা সম্ভব নয়। পুরীর জগন্নাথদেবের রথের মেলার পরেই পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরের মাহেশের রথের মেলার স্থান। বঙ্কিমচন্দ্রের রাধারানী উপন্যাসেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। বীরভূমে কেদুলিতে জয়দেবের জন্মস্থানে মকর সংক্রান্তির মেলা। এখানে বাংলার প্রাচীন বাউল গানের আসর বসে। নদীয়ার শান্তিপুরে রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে রাস মেলা হয়। কোচবিহারে মদনমোহনের রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে রাসের মেলা বসে। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রমে বসে সাগর মেলা। এছাড়াও বিভিন্ন ঋতু অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
সমস্ত রচনা দেখতে: Click Here
আধুনিক মেলা:
বাংলার মেলার বৈচিত্র অনেক। বাংলার বেশিরভাগ মেলা গ্রামীণ জীবন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। তবে বর্তমানে কিছু আধুনিক মেলার প্রচলন হয়েছে। এ ব্যাপারে শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা উল্লেখের দাবি রাখে। এছাড়াও কলকাতার বইমেলা এখন প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই সব মেলা কে কেন্দ্র করে শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির এক মিলন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বাংলার সংস্কৃতির সাথে বিশ্ব সংস্কৃতির মেলবন্ধনের কেন্দ্রবিন্দু এই মেলা।
উপসংহার:
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের লেখা- এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা। এই বাংলায় প্রাণপ্রাচুর্যের প্রচুর উদাহরণ মেলে। বাংলা আজ বহু সমস্যায় জর্জরিত। তবু তার মেলা গুলি তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা, আনন্দ কলরব সমস্ত নিয়ে আজও সজীব। মেলা বাংলার সংস্কৃতিক জীবনের অঙ্গ। মেলাগুলি নানাভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সতেজ করে তোলে। তাদের মাধ্যমে গ্রামীণ কুটির শিল্প গুলি বেঁচে থাকার রসদ পায়। এইসব মেলা মানুষকে সামাজিক জীবনের একঘেয়েমি আমি থেকে মুক্ত করে। কর্মবহুল জীবন যাত্রা ও নিয়ম-শৃঙ্খলা থেকে একটু বেরিয়ে এসে নতুন করে মানুষকে বেঁচে থাকার উপাদান যোগায়।