মোবাইলের সুফল ও কুফল রচনা

মোবাইলের সুফল ও কুফল রচনা

মোবাইলের সুফল ও কুফল

ভূমিকা:

আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার নবতম আবিষ্কার হল ইন্টারনেট, ই-মেল, ও মোবাইল ফোন। যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার হল মোবাইল ফোন। তার বিহীন এই ক্ষুদ্র মোবাইল যন্ত্রটির মাধ্যমে আমরা মুহূর্তে দেশে বিদেশে থাকা মানুষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারি, সমস্ত প্রকার খবরা খবরের আদান-প্রদান করতে পারি। গত কয়েক বছরের মধ্যে যে ছোট যন্ত্রটি আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দেখা দিয়েছে। মোবাইল ফোন ছাড়া আমাদের এক মুহুর্তও চলে না।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রসার:

এখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার সর্বস্তরেই। সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, বা নিম্নবিত্ত সব পরিবারেই মোবাইল ফোনের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে। এই যন্ত্রটি স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায়, আবার বেশি দামের স্মার্টফোনও আছে। সুবিধামূলক মূল্যে ও আকর্ষণীয় শর্তে পাওয়া যায় বলে এটা সর্বস্তরের মানুষ ব্যবহার করেছে। বিশেষত বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কাছে এর আকর্ষণ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতেও এর ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সকলের ধারণা।

👉 সমস্ত রচনা দেখতে: Click Here
মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তার কারণ:

বর্তমানে মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তার অনেকগুলি কারণের মধ্যে বিশেষ বিশেষ কারণ হলো-
প্রথমত, দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য মোবাইল ফোন এত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। স্বল্পমূল্যে ফোনটি কেনা যায় বলে সব ধরনের মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে সর্বত্র পাওয়া যায় এবং সব জায়গায় এটি ব্যবহার করা যায় অতি সহজে।
তৃতীয়ত, কম খরচে এস. এম. এস. এর মাধ্যমে গ্রাহক যেকোনো সংবাদ আত্মীয়, পরিজন, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কোন জায়গায় পৌঁছে দিতে পারে।
চতুর্থত, ল্যান্ড লাইন ফোনে মাঝে মাঝে প্রচুর টাকার বিল আসে। মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটে না। পুলিশের যেকোনো তদন্তের কাজে মোবাইল ফোন একটা বড় হাতিয়ার রূপে কাজ করে। অপরাধীদের ব্যবহার করা মোবাইল ফোনের কল লিস্ট চেক করে অন্যান্য সন্দেহ ভজন ব্যক্তির নাম খুঁজে পাওয়া যায়। যেকোনো অপরাধমূলক তদন্তের কাজে মোবাইল ফোন এখন একটি অপরিহার্য বস্তু।
এছাড়া বর্তমানে স্মার্টফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিভিন্ন বিষয়ের খোঁজখবর, প্রাত্যহিক খবর, ক্যামেরা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া যায়। মোবাইল ফোন শুধু প্রয়োজন মেটাই না, চিত্ত বিনোদনের একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে খুব কম সময়ে ছবি বা কোন ঘটনা বা অফিস আদালতের সার্কুলার প্রভৃতি খুব কম সময়ে পৌঁছে দেওয়া যায়। আজকের দিনে এই ব্যবস্থাটি খুবই কার্যকরী ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব:

মোবাইল ফোনের ব্যবহার সভ্য জীবনের একটা অপরিহার্য ব্যবস্থা হয়ে উঠলেও এর ক্ষতির দিকও রয়েছে। মোবাইল ফোনে বেশি কথা বলা বা ব্যবহার করা ঠিক নয়। বর্তমানে আট থেকে আশি বছরের সবাই মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে যে এটা ঠিক নয়। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। মোবাইল ফোনে অনর্থক কথা বলা, এস এম এস করা, গেম খেলা বা নানা ধরনের পর্নো ছবি দেখায় লিপ্ত থাকে ছেলেমেয়েরা। এটি একটি নেশার মতো যুব সমাজকে গ্রাস করেছে। কানে মোবাইল ফোনের কর্ড লাগিয়ে রাখাই কারো কথা শুনতে পায় না বা শুনতে চাই না। একটা বেপরোয়া ভাব দেখা যায় এদের মধ্যে। আবার ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়ার সময় কোনো দিকে খেয়াল থাকে না, এতে অকালে অনেক প্রাণ চলে যায়। অনেক গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অনেকের বিপদ ডেকে আনে। অত্যধিক মোবাইল ফোনের ব্যবহার মস্তিষ্কে ক্যান্সার হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা সমীক্ষা করে জানিয়েছেন।

উপসংহার:

মোবাইল ফোন আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। কিন্তু ক্ষতিও হচ্ছে প্রচুর। মোবাইল ফোনের ব্যবহারে কিশোর – কিশোরীরা এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছে, যে তারা পারিপার্শ্বিক দিকে তাকাচ্ছে না। এমনকি পরিবারের বাবার আর্থিক অবস্থার কথাও ভাবছে না। তাদের চাহিদা পূরণের জন্য বাবা-মার ওপর চাপ সৃষ্টি করে পরিবারে অশান্তি বাড়াচ্ছে। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হবে ভবিষ্যতে দেশের কর্ণধার। তারা যদি এইভাবে গা বাঁচিয়ে চলে, তাহলে দেশটা গড়বে কারা? আমাদের মনে রাখতে হবে ভারতের বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র, অশিক্ষিত। সর্বাগ্রে এদের অন্যদের কথা চিন্তা করতে হবে। বৈজ্ঞানিক তথ্য ও প্রযুক্তির সাহায্যে দেশের জনসাধারণের মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। অন্ধভাবে মোবাইল ফোন দিয়ে বিলাসিতায় মগ্ন হয়ে থাকা নয়।

Leave a Comment

CLOSE