বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা ৪০০ শব্দে

মাধ্যমিক সহ সমস্ত শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ: বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা ৪০০ শব্দে

বাংলার উৎসব

ভূমিকা:

“বাংলার মাটি, বাংলার হাওয়া, বাংলার ভাষা, বাংলার গান
বাংলার উৎসবে যেন মেতে ওঠে বাঙালির প্রাণ।”

মানব হৃদয় চির আনন্দ পিপাসু। রবি ঠাকুর সেই কোন কালে বলেছিলেন, আনন্দধারা বহিছে ভুবনে। সেই আনন্দ ধারায় আমরা বাঙালিরা কতকাল ধরেই না গা ভাসিয়েছি। উৎসব শব্দটি শুনলেই যেন মনে হয় কোথা থেকে একরাশ আনন্দ সিক্ত মেঘ আমার হৃদয় আকাশে তার ইচ্ছে ডানা বিস্তার করে। হ্যাঁ, আমি জানি উৎসবের সাথে কোন জাতি দীর্ঘ সংস্কৃতি ইতিহাস জড়িয়ে থাকে কিন্তু নিরেট আনন্দ উপভোগ করাটাই আমার লক্ষ্য। আবার আমাদের বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে প্রচলিত বারো মাসে তেরো পার্বণ অর্থাৎ বছরে একটার পর একটা উৎসব লেগেই থাকে।

উৎসব কি:

উৎসব মানে আনন্দ, উচ্ছাস; ভেদাভেদ নয়। উৎসব মানে প্রকৃত স্বর্গের নীড় রচনা; উৎসব মানে বিবেক , প্রীতি, প্রেম উৎসব মানে মনুষত্ববোধের জাগরণ। কবির ভাষায়–

“প্রীতি প্রেমের পূর্ণ বাঁধন
যবে মিলি পরস্পরে
স্বর্গ এসে দাঁড়ায় তখন
আমাদেরই কুঁড়েঘরে।”

সামাজিক উৎসব:

আমাদের সামাজিক মেলবন্ধনের অন্যতম প্রতীকবাহি নানান সামাজিক অনুষ্ঠান। এককালে গ্রামের চন্ডী মন্ডলের কোলে নানান আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন হত। এখন ক্রমশ: আধুনিকতার দিকে ধাবমান সমাজে রাখিবন্ধন, জন্মদিন, পৈতে গ্রহণ, ভাতৃদ্বিতীয়া, দোল উৎসব, বিবাহ অনুষ্ঠান প্রভৃতি কিছুটা হলেও আনন্দের রসদ বয়ে আনে। যাই হোক ক্রমশ: যান্ত্রিকতার কিষ্ট সমাজে এই উৎসবগুলি যেন সামাজিক মেলবন্ধন স্থাপন করে।

পারিবারিক উৎসব:

মানুষ সামাজিক জীব আর পরিবার তার অংশবিশেষ। তবে কাজের তাগিদে এবং জীবিকার সন্ধানে পরিবারের প্রিয় মানুষগুলিকে দূরে সরে যেতে হয়। কিন্তু কোন পারিবারিক অনুষ্ঠান আবার তাদের একত্রিত করে। তখন যেন মনে হয়, এক মরুময় পথ যাত্রায় এক পশলা বৃষ্টি। পারিবারিক উৎসবের মধ্যে পড়ে বিবাহ অনুষ্ঠান, পৈতে গ্রহন, অন্নপ্রাশন, ভ্রাতৃতীয়া প্রভৃতি।

উৎসবের একাল ও সেকাল:

বর্তমানে উৎসব বলতে বোঝানো হয় আলোকসজ্জা, মন্ডপসজ্জা, জাকজমক। এতে নেই কোন প্রাণ বন্দনা, নেই কোন আন্তরিকতা, নেই কোন প্রীতি প্রেমের পণ্য মন।
অথচ পূর্বে উৎসব বলতে বোঝানো হতো সত্যিকারের আন্তরিকতা। আলোকসজ্জা বা জাঁকজমক না থাকলেও সমর উৎসব মা নেই ছিল প্রীতি ও প্রেমের মায়াবী বান্ধন।

সমস্ত রচনা দেখতে: এই পেজে ভিজিট করুন
ধর্মীয় উৎসব:

ধর্ম মানুষের আদিম প্রবৃত্তি। এক কালে মানুষ ধর্মীয় অনুশাসনের দাস হয়ে জীবন কাটিয়েছে। কিন্তু আজ ক্রমশ: আধুনিকতার দিকে ধাবমান বাঙালি উৎসবকে ধর্মীয় গণ্ডির বন্ধনেই আবদ্ধ রাখেনি, তাকে গড়ে তুলেছে বিশ্ব মানবের মিলনস্থলে। তাই কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছেন-

“এত বঙ্গ ভঙ্গদেশে
তবু রঙ্গে ভরা।”

আরও একটি রচনা দেখতে পারেন: বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

ঋতুভিত্তিক উৎসব:

আবার আসিব ফিরে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে। কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার এই লাইন নবান্ন আজও বাঙালির জীবনসঙ্গী। খাদ্য রসিক বাঙালি পৌষ পার্বণের ভোজন রসেও মেতে ওঠে। তারপর-

“বাতাসে বহিছে প্রেম
নয়নে লাগিল নেশা
কারাযে ডাকিছে পিছে
বসন্ত এসে গেছে….”

শান্তিনিকেতনের শান্ত শ্যামল প্রকৃতির গায়ে এই বসন্ত উৎসব বাঙালির জীবনে রামধনুর রং বিস্তার করে।

জাতীয় উৎসব:

সবার আগে আমি ভারতীয়। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব, সংহতি রক্ষা 2রা অক্টোবর গান্ধী জন্মজয়ন্তী, ২৩ শে জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন, ২৬ শে জানুয়ারী প্রজাতন্ত্র দিবস, ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন একান্ত অনিবার্য।

মানুষের ওপর প্রভাব:

দুর্গাপুজোর দশমীর দিন মন বড়ই ভারাক্রান্ত লাগে। কোথা থেকে একরাশ মুখভাড় করা মেঘ যেন হৃদয় আকাশে চেয়ে থাকে। সেই দিন আমি উপলব্ধি করি যে উৎসব যদি না থাকতো তাহলে জীবন মৃত্যুরই নামান্তর হত।

উপসংহার:

আনন্দবাজার পত্রিকায় একবার দেখেছিলাম-
“আজ থাক দলাদলি, মারামারি, আজ সন্ধিপুজো।”

খুব ভালো হতো যদি আমরা উৎসবের জোয়ারে মনের সমস্ত ভেদ ধুয়ে দিয়ে নতুনভাবে মনকে প্রতিষ্ঠিস্থাপিত করতে পারতাম। তবেই এই সমাজ হত আরো উন্নত, আরো উজ্জ্বল।

Subscribe Our YouTube Channel: TextbookPlus

Leave a Comment

CLOSE