এখানে মাৎস্যন্যায় বলতে কী বোঝায় / মাৎস্যন্যায় টীকা / মাৎস্যন্যায় বলতে কী বোঝায় কিভাবে এর অবসান ঘটে তার উত্তর দেওয়া হলো।
মাৎস্যন্যায় টীকা:
মাৎস্যন্যায় বলতে এমন এক অরাজক পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে শক্তিশালী ব্যক্তি দুর্বলদের শোষণ করে, যেমন বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে। বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্কের মৃত্যুর পর, খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় একশো বছর ধরে মাৎস্যন্যায়ের শাসনকাল চলেছিল।
এই সময়ে বাংলায় কোনো কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ছিল না। ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ, ও বণিকরা নিজেদের মতো এলাকা শাসন করত। তবে, অরাজকতা থেকে মুক্তি পেতে বাংলার প্রভাবশালী লোকেরা গোপালকে রাজা নির্বাচন করে। আনুমানিক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় বাংলায় পাল বংশের রাজত্ব, যা এই মাৎস্যন্যায়ের অবসান ঘটায়।
মাৎস্যন্যায় বলতে কী বোঝায়?
মাৎস্যন্যায় বলতে এমন এক অরাজক অবস্থাকে বোঝায় যা গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর থেকে পালদের উত্থান পর্যন্ত বাংলায় বিরাজ করেছিল। এই সময়ে শক্তিশালী লোকেরা দুর্বলদের উপর অত্যাচার করত। এটি ইতিহাসে “মাৎস্যন্যায়” নামে পরিচিত। পুকুরের বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে, তেমনই সবলরা দুর্বলদের শোষণ করত।
এই অবস্থার অবসান ঘটাতে বাংলার প্রভাবশালী লোকেরা গোপাল নামে একজনকে সিংহাসনে বসান। এভাবেই বাংলায় পাল রাজবংশের শাসন শুরু হয়।
মাৎস্যন্যায়: অর্থ ও তাৎপর্য
মাৎস্যন্যায় শব্দটির দুটি ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। প্রথমত, সাধারণ অর্থে এটি বোঝায় “মাছের মতো”। যেমন, একটি পুকুরে বড় মাছ ছোট মাছকে গিলে খায়, তেমনই শক্তিশালী ব্যক্তি দুর্বলদের উপর শোষণ চালায়। দ্বিতীয়ত, বাংলার ইতিহাসে এটি একটি বিশেষ যুগকে চিহ্নিত করে।
মাৎস্যন্যায়ের সাধারণ অর্থ
প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে মাৎস্যন্যায় শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এটি এমন এক সামাজিক অবস্থাকে বোঝায় যেখানে শক্তিশালী ব্যক্তিরা দুর্বলদের শোষণ ও লুণ্ঠন করে।
বাংলার ইতিহাসে মাৎস্যন্যায়ের সময়কাল
গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের মধ্যভাগ) থেকে পাল বংশের উত্থানের আগ পর্যন্ত বাংলার ইতিহাসে একশো বছরের বেশি সময় ধরে মাৎস্যন্যায় চলতে থাকে। এই সময় বাংলায় কোনো কেন্দ্রীয় শাসক ছিল না।
রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি
মাৎস্যন্যায়ের যুগে বাংলায় রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিরাজ করছিল। প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, ব্রাহ্মণ ও বণিক নিজের মতো করে ছোট ছোট এলাকা শাসন করত। সাধারণ মানুষ দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতো।
অরাজকতার প্রভাব
এই সময় বাংলার অর্থনীতি ভেঙে পড়ে এবং বৈদেশিক আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। গৃহযুদ্ধ, হত্যা, ও দুর্বলদের উপর অত্যাচার বাংলাকে একটি বিশৃঙ্খল রাজ্যে পরিণত করে।
মাৎস্যন্যায়ের অবসান এবং গোপালের উত্থান
এই সংকটময় অবস্থার অবসান ঘটে যখন বাংলার প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সমাজপতিরা একত্রিত হয়ে গোপাল নামে এক দক্ষ নেতাকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার রাজা নির্বাচন করেন। গোপালের সুশাসনের মাধ্যমে পাল বংশের সূচনা হয় এবং মাৎস্যন্যায়ের অবসান ঘটে।
আরও দেখো: নরমপন্থী বলতে কী বোঝায়?