প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, তোমাদের তৃতীয় ইউনিট টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৫ নভেম্বর, ২০২২ থেকে ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ এর মধ্যে। তোমাদের সুবিধার্থে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে সকল বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং কয়েকটি মডেল প্রশ্নপত্র শেয়ার করলাম। তোমরা পাঠ্য বইটি ভালো মতো পড়ে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর খাতায় লিখে রাখবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর করতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাও।
3rd Unit Test অষ্টম শ্রেণী বিষয়: বাংলা পূর্ণমান: 70 সময়: 2 ঘন্টা 30 মিনিট
জেলখানার চিঠি:
👉 প্রশ্নমান: ৫
১. “আমার মনে হয় অপরাধীদের অধিকাংশেরই কারাবাসকালে নৈতিক উন্নতি হয় না।” – কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে? লেখকের এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তর: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ‘জেলখানার চিঠি’ গদ্যে জেলে বন্দি মানুষের অনিবার্য পরিণতি প্রসঙ্গে বলেছেন- “আমার মনে হয়, অপরাধীদের অধিকাংশেরই কারাবাসকালে নৈতিক উন্নতি হয় না, বরং তারা যেন আরও হীন হয়ে পড়ে।”
● আর এর কারণ সম্পর্কে তিনি জানান- তাঁর বিশ্বাস, জেলখানার সমস্ত আবহাওয়া বন্দি মানুষকে বিকৃত ও অমানুষ করে তোলার উপযোগী। তিনি এই অবস্থা থেকে মুক্তির দিশাও দেখিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য কারাশাসনের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। আর সেই পদ্ধতি আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস- এর মতো উন্নত দেশগুলির গৃহীত পদ্ধতি হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে সুযোগ এলে তিনি তা করবেন বলেও পত্রে জানিয়েছেন। সবশেষে তিনি বলেন- অপরাধীকে নৈতিক উন্নতির জন্য সবার আগে দরকার একটি নতুন প্রাণ, সদর্থক মনোভাব ও সর্বোপরি তাদের প্রতি একটু দরদ, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা।
২. “আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন” – কে, কাকে এ কথা বলেছেন? কীসের উত্তর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে এ কথা বলেছেন।
● নেতাজি দিলীপকুমার রায়ের লেখা পড়ে অভিভূত। চিঠিটি সুভাষচন্দ্র বসুর হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর মনকে সেই চিঠি এতটাই স্পর্শ করেছে যে, তিনি যেন নতুন এক চিন্তায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন। দিলীপকুমারের লেখায় তাঁর মন এমন বিমােহিত হয়ে উঠেছে যে, তাঁর পক্ষে সে চিঠির উত্তর দেওয়া সুকঠিন। এমনকি তিনি এও জানেন, যে তাঁর চিঠি censor হয়ে প্রাপকের কাছে যাবে। তাতে নেতাজির ব্যক্তিমনের গভীর আবেগ ও বেদনা অনেকের সামনে চলে আসবে, যা তিনি কোনােদিন চাননি। তাই এরকম চিঠি তাঁর পক্ষে লেখা সম্ভব নয় বলেই তিনি বলেছেন- “আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।
৩. ‘জেলখানার চিঠি’ -তে কারাবন্দি অবস্থাতেও দুঃখ-কাতর, হতাশাগ্রস্ত নয়, বরং আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী নেতাজির পরিচয় ফুটে উঠেছে -আলোচনা করো।
উত্তর: সুভাষচন্দ্র বসু মান্দালয় জেলে বন্দি জীবনযাপন করলেও চিঠির মধ্যে তাঁর মানসিক অবস্থার অবনতির কথা কোথাও নেই। তিনি এখানে দুঃখে কাতর বা হতাশায় মগ্ন নন। বরং দেখা যায়, খুব সহজ ও স্পষ্টভাষায় তিনি লিখছেন, কারাশাসনের সংস্কার প্রয়ােজন। এছাড়া জেলের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বই লিখতে চান। তিনি মনে করেন, দীর্ঘ কারাবাসে বা নির্জনতায় আধ্যাত্মিক উন্নতি হতে পারে। তিনি আশা করেন, জেলের ভিতরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি বন্দিদের জীবনে উৎকর্ষসাধন করতে পারে। সর্বোপরি ভাবেন, অশুপাতের ভিতর অনেক মহত্তর কর্ম লুকিয়ে আছে। অর্থাৎ, বিনা দুঃখ-কষ্টে মহৎ কিছু লাভ করা সম্ভব নয়। সুতরাং, সুভাষচন্দ্র বসু রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে কারাবাসের সময় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার দ্বারা কারাশাসনের অব্যবস্থা ও বন্দিদের চরম দুর্ভোগ উপলব্ধি করলেও তিনি দুঃখকাতর বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েননি। বরং, আত্মবিশ্বাসী হয়ে দুঃখ জয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
👉 প্রশ্নমান: ৩
১. Martyrdom’ শব্দটির অর্থ কী? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তা কী বক্তব্য রেখেছেন?
উত্তর: Martyrdom’ শব্দের অর্থ হল ‘আত্মবলিদান। অন্যভাবে বলা যায় রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য বা মহৎ আদর্শের খাতিরে স্ব-ইচ্ছায় প্রবল কষ্টভােগ করা।
● এই শব্দটির উল্লেখ করে বক্তা বলেছেন, দিলীপকুমার রায় তাঁর কারাবাসকে আ বলিদানের সঙ্গে তুলনা করলেও, নিজে তিনি সেটিকে সেভাবে মনে করার স্পর্ধাও রাখেন না। এটি তার কাছে বড়ােজোর একটা আদর্শ হতে পারে।
২. ‘পরের বেদনা সেই বুঝে শুধু যে জন ভুক্তভােগী। -উদ্ধৃতিটির সমার্থক বাক্য পত্রটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখাে। সেই বাক্যটি থেকে লেখকের কোন মানসিকতার পরিচয় পাও?
উত্তর: পাঠে উল্লিখিত আলােচ্য উদ্ধৃতিটির সমার্থক বাক্য হল— “আমি যদি স্বয়ং কারাবাস না-করতাম তাহলে একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে ঠিক সহানুভূতির চোখে দেখতে পারতাম।”
● ওপরের বাক্য থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, নেতাজি কারাবন্দিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তিনি মনে করেন, জেলখানা কেবল শাস্তিদানের জায়গা নয়, তা সংশােধনের স্থানও হওয়া উচিত। তাই তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের সংশােধনের মধ্যে দিয়ে সমাজজীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী। কিন্তু এদেশের কারাগারের যে শাসন-প্রণালী, তাতে বন্দিদের সুকোমল মানসবৃত্তি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। লেখক তার সহানুভূতিশীল মন দিয়ে এগুলি উপলব্ধি করেন। সুতরাং, এর থেকে বােঝা যায়, তিনি দরদি ও অনুভূতিশীল মনের অধিকারী।
৩. বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তি সঞ্চারিত হয় কীভাবে?
উত্তর: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মনে করনে, একটি দার্শনিক ভাব জেলে বন্দি মানুষের মনে শক্তি সঞ্চার করে। বন্দি অবস্থায় সব মানুষই তার জীবন ও জগৎ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণালাভের চেষ্টা করে। যথেষ্ট সময় থাকার কারণে নিজের অন্তরের দিকে তাকানোর সুযোগ পে এবং যে-কোনোভাবে মানসিক শান্তি ও স্বস্তিলাভের জন্য দার্শনিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়। আর সেটিই বন্দি মানুষের মনে শক্তির সঞ্চার করে।
স্বাধীনতা:
👉 প্রশ্নমান: ৫
১. ‘স্বাধীনতা’ কবিতা অবলম্বনে কবির স্বাধীনতা বোধের পরিচয় দাও।
উত্তর: পাঠ্য ‘স্বাধীনতা’ কবিতাটি ল্যাংস্টন হিউজের কবিতার অনুবাদ। কবির মতে, পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ স্বাধীনতার বোধ নিয়ে জন্মায়। তার বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেই বোধের বিস্তার ঘটে। একইসঙ্গে কবির বিশ্বাস, জাতির সামগ্রিক উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরাধীন কোনো জাতির মানুষ কখনই আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়ে বিকশিত ও উৎকর্ষতা পেতে পারে না। স্বাধীনতা আমাদের পুরোনো ধ্যানধারণা, বোধ, চেতনাকে সংবদ্ধ করে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়। কবি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ক্ষমতাবান সাম্ৰাজ্যবাদী শাসক ও শোষকরা পদানতদের স্বাধীনতা দিতে চায় না- কোনো অধিকার না-দিয়ে সবসময় বা আপস নয়, স্বাধীনতা পা
২. স্বাধীনতা বলতে কী বোঝো? কী কী বিষয়ে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়োজন বলে তুমি মনে করো।
উত্তর: ‘স্বাধীনতা’ একটা ধারণা। স্বাধীনতা’ বলতে বােঝায়, নিজের অধীনে থাকা। ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য ও স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রেখে বেঁচে থাকাই স্বাধীনতা। কোনাে দেশের স্বাধীনতা কেবল স্বজাতীয় শাসকের অধীনে বসবাস করাকে বােঝায় না। দেশের শাসক শ্রেণি স্বদেশবাসীর বৈশিষ্ট্যকে নিজের ক্ষমতায় দমন করলেও স্বাধীনতা লাভ হয় না।
● নানা বিষয়ে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়ােজন। যেমন- বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, লেখাপড়া, ব্যাবসাবাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়ের স্বাধীনতা। প্রভৃতি। এ ছাড়া অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদার ব্যাপারেও মানুষের স্বাধীনতা থাকা প্রয়ােজন।
আদাব:
👉 প্রশ্নমান: ৫
১. “ভুলুম না ভাই এই রাতের কথা।’ -কোন রাতের কথা বলা হয়েছে? ‘আদাব’ গল্প অনুসরণে সেই ভয়াল রাতের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পটভূমিতে লেখা সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্প থেকে এই পঙক্তিটি উদ্ধৃত।
এখানে হিন্দু সুতােমজুর আর মুসলমান নায়ের মাঝি দাঙ্গাবিধ্বস্ত একটি শহরে একটি ডাস্টবিনের আড়ালে আশ্রয় নেয়। কারণ, কোনাে মানুষ ১৪৪ ধারা আর কারফিউ জারি থাকার ফলে দলবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে সন্ধেবেলায় বেরােতে পারছে না। কিন্তু গল্পে উল্লিখিত দুটি মানুষ আলাদা সম্প্রদায়ের হলেও তারা দুজনেই শ্রমজীবী এবং উভয়ই দুঃখ-দারিদ্র্যের শিকার। দাঙ্গার শিকার। তাই তারা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল, পরস্পরের সহমর্মী। সেজন্য মৃত্যু বিভীষিকাময় শহরের মধ্যে থেকে মাঝি, সাত-আট দিন পর নিজের বাড়ি যেতে চায়। কিন্তু সুতােমজুর তার বিপদের কথা ভেবে বারবার বাধা দেয়। তার এই ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে মাঝি তাকে জানায়, সে এই রাত্রের কথা ভুলবে না।
২. “এমনভাবে মানুষ নির্মম নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে কী করে?” —উদ্ধৃতিটির আলােকে সেই সময়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি আলােচনা করাে।
উত্তর: ‘আদাব’ গল্পের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হিসেবে লেখক ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গকে ইঙ্গিত করেছেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট, ব্রিটিশ রাজের অবসানের পর ভারত দ্বি-খণ্ডিত স্বাধীনতা পায়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বীজ ভারতবর্ষকে—ভারতবর্ষ, পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানে বিভক্ত করে। ব্রিটিশ সরকার এই দেশের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বিভাজন তৈরি করেছিল, তার পরিণতি ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। শহরে তখন ১৪৪ ধারা আর কারফিউ জারি হয়েছে, যার ফলে দলবদ্ধভাবে কোথাও ঘােরাঘুরি করা যাবে না কিংবা নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরােনাে যাবে না। সবসময় চলছে মিলিটারি টহল । কিন্তু তার মধ্যেই কোনাে জায়গা থেকে ভেসে আসছে। গােলাগুলির শব্দ, শােরগােল। কারণ, হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা বেধেছে। যে যাকে পারে হত্যা করছে। গুপ্তঘাতকের দল ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। সুযােগ পেলেই তারা পরস্পরকে হত্যা করতে উদ্যত। অথচ হাটেবাজারে মানুষের মধ্যে কত হাসাহাসি, কথােপকথন আর তার পরেই সবাই মেতে ওঠে এমন নির্মম-নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে।
৩. হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির আবহ ‘আদাব’ গল্পে কীভাবে রচিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর: আদাব’ গল্পে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে-সম্প্রীতির আবহ পরিবেশ রচিত হয়েছে, তা বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতাে। যেমন—ডাস্টবিনের ধারে সদ্য পরিচিত দুই ভিন্নধর্মী মানুষ একসঙ্গে বিড়ি খায়, সুখ-দুঃখের কথা বলে। বিশেষ করে দাঙ্গার ফলে মুসলমান নায়ের মাঝি বলে, তার নৌকো হারানাের কথা আর সুতােমজুর জানায়, তার বােনের বিধবা হওয়ার কথা। তারা বুঝতে পারে না, মানুষ এত নির্মম হয় কী করে। এইভাবে তারা শহরের গলিখুঁজিতে লুকোয়। পরস্পরকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। সুতােমজুর মাঝির পরিবারের কথা ভাবে আবার তার মৃত্যুতে বেদনাহতও হয়ে ওঠে। এমনকি মাঝির ‘ভাই’ সম্ভাষণও বুঝিয়ে দেয় গল্পে। তাদের পারস্পরিক নির্ভরতা।
শিকল-পরার গান:
👉 প্রশ্নমান: ৫
১. “এ যে মুক্তিপথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা।” -শিকল পরার গান’ কবিতায় কবি কীভাবে মুক্তিপথের অগ্রদূতের চরণ বন্দনা করেছেন তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘শিকল পরার গান’ কবিতায় দেশমায়ের মুক্তির বাসনার এক আপোসহীন বেপরোয়া চিত্র অঙ্কন করেছেন। তিনি বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শক্তির দমন-পীড়ন-অত্যাচার-লাঞ্ছনা-গঞ্জনা মানুষের স্বাধীনতাস্পৃহাকে অবদমিত করে রাখতে পারবে না। সংহত প্রতিবাদী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে ইংরেজরা যে কারাগার তৈরী করেছে, দেশের সমস্ত বিদ্রোহী বীর সন্তানদের সেখানে নিক্ষেপ করেও স্বাধীনতার আন্দোলনকে বন্ধ করতে পারবে না। মাভৈঃ মন্ত্রকে বিজয়মন্ত্র মনে করে যে-কোনো বিরুদ্ধ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে। শৃঙ্খল ও তার ঝনঝনানি হবে তাদের মুক্তি- সংগীত। মুক্তির জন্য কবি কান্নাকাটি পছন্দ করেন না। বরং ফাঁসির মঞ্চে যারা জীবনের জয়গান গাইছে, কবি তাদের চরণ-বন্দনা করতে বলেছেন। আর এভাবেই আমরণ সংগ্রামে ব্রতী থেকেই এদেশের বীর সন্তানেরা স্বাধীনতার আলোক-সূর্যের উদয় ঘটাবে।
২. স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির বাসনা কীভাবে ‘শিকল পরার গান’ কবিতায় ধরা পড়েছে তা আলোচনা করো।
উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিষের বাঁশি কাব্যের অন্তর্গত ‘শিকল-পরার গান কবিতায় সমগ্র স্বাধীনতাকামী ভারতবাসীর মুক্তির বাসনা তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কবি ভারতের মুক্তিপিয়াসি মানুষের মনে সাহস জোগানাের জন্য এবং মুক্তির বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্য বলেছেন- শৃঙ্খলিত হয়ে তাঁদের কারাগারে প্রবেশ করা একটা ছলনামাত্র। এই শিকল পরেই তাঁরা পরাধীনতার শৃঙ্খলকে চূর্ণ করবেন। এই কারাবরণের মাধ্যমে তারা মুক্তিপিয়াসি মানুষের মন থেকে কারাবরণের ভীতিকে দূরীভূত করতে চান।
● ব্রিটিশরা যে ভয় দেখিয়ে তাঁদের শাসনজাল বিস্তার করছে, সেই ভয়ের কণ্ঠ রােধ করেই সকলকে সাহসী করে তুলতে চান। আলােচ্য কবিতায় দেশকে ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্ত করতে সমস্ত কষ্ট স্বীকার করে নিজেদের জীবন বলিদানের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মুখে হাসি ফোটানাের বার্তা ঘােষিত হয়েছে। কবি বলেছেন, দেশভক্তদের শরীরের হাড় দিয়ে পুনরায় বজ্র তৈরি হয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিনাশ ঘটাতে দেশে বজ্রের আগুন জ্বলবে। এভাবেই স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির বাসনা কবিতাটিতে ধ্বনিত হয়েছে।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়:
👉 প্রশ্নমান: ৫
১. ‘এর কৃতিত্ব অনেকাংশে শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য। …..’—কোন্ কৃতিত্বের কথা বলা হয়েছে ? তার বহুলাংশ ‘শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য বলে লেখক মনে করছেন কেন?
উত্তর: হীরেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ প্রবন্ধ থেকে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি নেওয়া হয়েছে। লেখক মনে করেন, যে-কোনাে বৃহৎ কাজের জন্য দরকার ঐকান্তিক নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও পরিশ্রম করার সদিচ্ছা। বিশেষ করে নিষ্ঠা ও অভিনিবেশ মহৎ কার্যের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। রবীন্দ্রনাথের সাদর আহ্বানে যে-সমস্ত মানুষ শান্তিনিকেতন আসেন, তাঁরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুমহান কীর্তি রেখে গিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে এসে সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে ওঠার প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক কথাটি বলেছেন।
● লেখক মনে করেন, শান্তিনিকেতনের জল-মাটিআবহাওয়ার এমনই গুণ আছে যে, এখানে আসার পর সবাই পরিপুষ্টি লাভ করেন। শান্তিনিকেতন তৈরি করেছে বহু গুণী মানুষ। শুধু হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় নয়। বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমােহন সেন প্রমুখ এই গােত্রের মধ্যে পড়েন। আসলে শান্তিনিকেতন স্নেহ, ভালােবাসা ও ঔদার্যে সবাইকে আপন করে নিয়ে তাদের কাছে যা দাবী করে, তা সসম্মানে আদায়ও করে নিতে পারে। লেখক তা সম্যক উপলব্ধি করতে পারেন। বলেই শান্তিনিকেতন সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।
👉 প্রশ্নমান: ৩
১. ‘আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের দান অপরিসীম।’ লেখক এ প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনের কোন্ কোন্ গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলি হল— শান্তিনিকেতন শুধু বিদ্যাদানের স্থান নয়, বিদ্যাচর্চা ও বিদ্যা বিকিরণেরও স্থান। এমনকি বিদ্যার্জনের পথ সুগম করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও শান্তিনিকেতনের মতাে বিদ্যাকেন্দ্রের অবদান ছিল। বিদ্যাকেন্দ্রের প্রধান কাজ হল— শিক্ষার পথকে সহজ করা। কিন্তু সেই সময় কোনাে বিদ্যালয়— এমনকি কোনাে বিশ্ববিদ্যালয়ই সবার মধ্যে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেনি। এমনকি ভাবেওনি। কিন্তু শান্তিনিকেতন কিন্তু তার জন্মলগ্ন থেকেই তা ভেবেছে। আর শুধু ভাবা নয়, তাকে কার্যকর করে বিশ্বের কাছে অভূতপূর্ব উদাহরণ রেখেছে। এই কারণেই শিক্ষার ভিত্তিভূমি হয়ে ওঠে এই শান্তিনিকেতন।
ঘুরে দাঁড়াও:
👉 প্রশ্নমান: ৫
১. ‘ঘুরে দাঁড়াও’ কবিতায় কবি কোন আহ্বান জানিয়েছেন?
উত্তর: কবি প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত-র ‘ঘুরে দাঁড়াও’ কবিতাটি মানুষের আত্মজাগরণের সংগীত। এর মধ্যে মানুষ তার ইতিকর্তব্য উপলব্ধি করে নিতে পারে। এতকাল ধরে সমাজে যে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, অপরাধ সংঘঠিত হয়ে এসেছে, তা নির্মূল করার সময় এসেছে। এখন সময় সব কিছু রুখে দেওয়ার। যে-কোনো মূল্যে আজকের দূষণ- কালিমালিপ্ত সমাজ ও পরিবেশকে বদলে দিতে হবে গড়ে তুলতে হবে সর্ব দূষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। আজকের সমাজকে যে অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকে পালটাতে না-পারলে সবাইকে চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হবে, এমনকি মৃত্যু হওয়ায় বিচিত্র নয়। তাই কবির আহ্বান- হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই সামাজিক সংকটকে কাটিয়ে উঠতে হবে, সমাজকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় এমন পরিস্থিতি হবে যখন সমস্ত মানুষের অস্তিস্ত্বই লোপ পাবে। সুতরাং কালবিলম্ব না-করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
👉 প্রশ্নমান: ৩
১. “এবার ঘুরে দাঁড়াও।” আর “এখন ঘুরে দাঁড়াও।”— পঙক্তি দুটিতে ‘এবার’ আর ‘এখন’ শব্দদুটির প্রয়ােগ সার্থকতা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ‘এবার’ আর ‘এখন’ কথা দুটির অর্থ একই—এই সময়। তবে কবিতায় ‘এবার’ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে এই অর্থে যে, বারবার সরতে সরতে সরে দাঁড়ানাের জায়গা যখন নেই, তখন ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।
‘এখন’ বলতে এই মুহূর্তকে বােঝানাে হয়েছে অর্থাৎ, কবির কথা শােনামাত্র সময়টুকুকে। কারণ, প্রথম কথাটিতে অতীতের একাধিক স্মরণ-এর কথা আছে, তাই এবার’ কথাটি এখানে যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বিতীয় কথাটিতে ভবিষ্যৎ অনুমানের কথা আছে। তাই এখন কথাটি এখানে প্রযুক্ত।
👉 সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্টের প্রশ্নপত্র : Click Here
আরও প্রশ্নপত্র পেতে: Click Here
👉 আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করো:Click Here