Class 7 History Chapter 8 Question Answer | মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট

Class 7 History Chapter 8 Question Answer | মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট

সপ্তম শ্রেণী
ইতিহাস
অষ্টম অধ্যায়
মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট

১. নীচের নামগুলির মধ্যে কোন্‌টি বাকিগুলির সঙ্গে মিলছে না তার তলায় দাগ দাও :

(ক) পুণে, কোঙ্কন, আগ্রা, বিজাপুর।
উত্তর: আগ্রা

(খ) বান্দা বাহাদুর, আফজল খান, শায়েস্তা খান, মুয়াজ্জম।
উত্তর: বান্দা বাহাদুর।

(গ) অষ্টপ্রধান, বর্গি, মাবলে, খালসা।
উত্তর: খালসা।

(ঘ) রামদাস, তেগবাহাদুর, জয়সিংহ, হরগোবিন্দ।
উত্তর: জয়সিংহ।

(ঙ) কেশ, কৃপাণ, কলম, কঙ্ঘা।
উত্তর: কলম।

২. ‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মিলিয়ে লেখো :

উত্তর:
রায়গড় —- শিবাজি
হিন্দুপাদপাদশাহি —- প্রথম বাজীরাও
গোলকোন্ডা —- দাক্ষিণাত্য
সৎনামি —- নারনৌল
পাঠান উপজাতি —- উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত

৩. সংক্ষেপে (৩০-৫০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :

(ক) ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে কী কী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছিল?

উত্তর: ঔরঙ্গজেবের সময় মনসবদারি ও জায়গিরদারি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কৃষি সংকট। উজের বিজাপুর ও গোলকোল্ডা জয়ের পর দাক্ষিণাত্যের বিশাল অঞ্চল মুঘলদের হাতে এসেছিল। কিন্তু ওই অঞ্চলের ভালো জমিগুলি খাস জমি বা খালিসা হিসাবে ঔরঙ্গজেব রেখে দেওয়ায় জায়গির হিসাবে জমির পরিমাণ কমে গেছিল।
মুঘল শাসকরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বাড়াতে না পারায় সমস্যা আরও গভীর হয়েছিল। ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে মারাঠা রাজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল। শিখদের সঙ্গেও মুঘলদের রাজনৈতিক সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল।

খ) কবে, কাদের মধ্যে পুরন্দরের সন্ধি হয়েছিল। এই সন্ধির ফল কী হয়েছিল?

উত্তর: ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে শিবাজি এবং ঔরঙ্গজেবের প্রতিনিধি রাজা জয়সিংহের মধ্যে পুরন্দরের সন্ধি হয়েছিল। এই চুক্তির ফলে শিবাজি মুঘলদের নিজের অধিকৃত ২৩টি দুর্গ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এরপর শিবাজি আগ্রার মুঘল দরবারে পৌঁছোলে তাঁকে অপমান করা হয় এবং আগ্রার দুর্গে বন্দি করে রাখা হয়। শিবাজি সুকৌশলে একটি ফলের ঝুড়িতে করে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন এবং দাক্ষিণাত্যে পৌঁছে মুঘলদের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব আবার শুরু হয়। শিবাজির নেতৃত্বে মারাঠাদের উত্থান ঘটে এবং তাদের জাতীয় চেতনা জেগে ওঠে।

(গ) জাঠদের সঙ্গে মুঘলদের সংঘাত কেন বেঁধেছিল।

উত্তর: দিল্লি-আগ্রা অঞ্চলের জাঠরা ছিল প্রধানত কৃষক গোষ্ঠী। তাদের মধ্যে অনেকে আবার জমিদারও ছিল। রাজস্ব দেওয়া নিয়ে জাহাঙ্গির ও শাহজাহানের আমলে তাদের সঙ্গে মুঘলদের সংঘাত শুরু হয়। ঔরঙ্গজেবের আমলে তারা স্থানীয় এক জমিদারের নেতৃত্বে জোটকা হয়ে বিদ্রোহ করে। জাঠরা একটি পৃথক রাজ্য গঠন করতে চেয়েছিল।
মুঘলদের বিরুদ্ধে জাঠ প্রতিরোধ ছিল একদিকে কৃষক বিদ্রোহ, অন্যদিকে একটি আলাদা গোষ্ঠী পরিচয়ে জাঠরা একজেট হচ্ছিল।

(ঘ) শাহজাহানের সময়ে মনসবদারি ও জায়গিরদারি ব্যবস্থায় কী সমস্যা দেখা দিয়েছিল?

উত্তর: শাহাজাহানের সময় মনসবদারি ও জায়গিরদারি ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই মনসবদারদের তাদের পদ অনুযায়ী যা বেতন পাওয়ার কথা, তা দেওয়া যেত না। অনেক সময় আবার কৃষক বিদ্রোহের কারণে রাজস্ব আদায় করা যেত না। এ ছাড়া দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করাও সবসময় সম্ভব হচ্ছিল না। মনসবদাররা বেতন না পেলে তাদের যতজন ঘোড়সওয়ারের দেখাশোনা করার কথা, ততজনের দেখাশোনা করা যেত না, অর্থাৎ খাতায় কলমে হিসাবের সঙ্গে আসলে যা হচ্ছে তার তফাত বেড়েই চলেছিল। মনসবদারদের মধ্যে দুর্নীতির কারণে মনসবদারি ও জায়গিরদার ব্যবস্থা পতনের দিকে এগিয়ে চলেছিল।

(ঙ) বিজাপুর ও গোলকোন্ডা জয়ের ফলে মুঘলদের কী সুবিধা হয়েছিল?

উত্তর: ঔরঙ্গজেবের বিজাপুর ও গোলকোন্ডা জয়ের পর দাক্ষিণাত্যের বিশাল অঞ্চল মুঘলদের হাতে এসেছিল। এই অঞ্চলের সব থেকে ভালো জমিগুলি ঔরঙ্গজেব খাসজমি বা খালিসা হিসাবে রেখেছিলেন। সেগুলি জায়গির হিসাবে দেওয়া হতো না। খাস জমির রাজস্ব সরাসরি কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা হতো।

৪. বিশদে (১০০ – ১২০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :

(ক) মুঘলদের বিরুদ্ধে শিখরা কীভাবে নিজেদের সংগঠিত করেছিল?

উত্তর: শিখদের সঙ্গে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির এবং শাহজাহানের আমলে মুঘলদের সংঘাত দেখা দিয়েছিল । এই সংঘাতের চরিত্র ছিল রাজনৈতিক । মুঘলদের ধর্মীয় নীতি শিখদের সংগঠিত করার কাজে সাহায্য করেছিল । ষোড়শ শতকের শেষের দিকে চতুর্থ গুরু রামদাসের ছেলে অর্জুনদের গুরু হন । এই সময় থেকেই শুরু হয় বংশানুক্রমিক গুরু নির্বাচন । ফলে মুঘল রাষ্ট্রে শিখরা এক স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে উত্থান ঘটায় । মুঘলদের ধর্মীয় নীতি শিখদের এই ক্ষমতায় আঘাত হানে । ফলে তারা দশম শিখগুরু গোবিন্দ সিংহের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয় । ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে গুরু গোবিন্দ সিংহ খালসা নামক একটি সংগঠন তৈরি করেন । যেখানে শিখদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া ছিল দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ । গুরু গোবিন্দ সিংহ শিখদের ‘ পন্থা ’ বা পথ ঠিক করে দেন । যা শিখদের মুঘলদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে সাহায্য করেছিল । এ ছাড়া খালসাপন্থী শিখরা সিংহ পদবি ব্যবহার করতে শুরু করে । যা তাদের ভ্রাতৃত্ববোধের সংগঠনকে জাগরিত করে।

(খ) মুঘল যুগের শেষ দিকে কৃষি সংকট কেন বেড়ে গিয়েছিল? এই কৃষি সংকটের ফল কী হয়েছিল?

উত্তর: মুঘল যুগে অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি, নানা কারণে মুঘল যুগের শেষ দিকে কৃষি সংকট বেড়ে গিয়েছিল। মুঘল যুগের শেষের দিকে ফসলের উৎপাদন বেড়ে গিয়েছিল কিন্তু কৃষির উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছিল। দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধের সময়ে রাজস্ব আদায়ের জন্য মুঘল মনসবদাররা মারাঠা সর্দারদের সাহায্য নিত ওইসব অঞ্চলে মুঘলদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে গিয়েছিল। এদিকে সপ্তদশ শতকে আবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এর জন্যে অভিজাতরা চাইলেন জমি থেকে তাঁদের আয় আরও বাড়াতে। তাঁরা জমিদার এবং কৃষকদের উপর চাপ বাড়াতে থাকেন। ফলে কৃষকরা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়। কোনো কোনো সময়ে কৃষকরা রাজস্ব না দিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেত। তখন তাদের জমিতে চাষ হতো না। চাষ না হলে রাজস্বও আদায় হতো না। এইভাবে কৃষিতে সংকট বেড়ে উঠেছিল।

এই কৃষি সংকটের ফলে মনসবদারি ব্যবস্থা সংকটপূর্ণ হয়ে পড়ে। দাক্ষিণাত্যের সবথেকে ভালো জমিগুলি ঔরঙ্গ জেব খাস জমি করে রেখেছিলেন। এগুলিকে জায়গির দেওয়া হতো না। সুতরাং জমির অভাব না থাকলেও ভালো আবাদি জমির পরিমাণ কমে যায়। মুঘল শাসকরা নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বাড়াতে পারেননি। ফলে কৃষি সংকট আরও গভীর হয়।

(গ) মুঘল যুগের শেষ দিকে জায়গিরদারি ও মনসবদারি ব্যবস্থায় কেন সংকট তৈরি হয়েছিল? মুঘল সাম্রাজ্যের উপর এই সংকটের কী প্রভাব পড়েছিল?

উত্তর: মুঘল আমলে জায়গিরদারি ব্যবস্থা ছিল শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি। মুঘল আমলে মনসবদাররা নগদ বেতন অথবা জায়গির পেতেন। শাহজাহানের আমল থেকেই জায়গিরদারি ও মনসবদারি ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই মনসবদারদের তাদের পদ অনুযায়ী যা বেতন পাওয়ার কথা তা দেওয়া যেত না। অনেক সময় আবার কৃষক বিদ্রোহের কারণে রাজস্ব আদায় করা যেত না। এ ছাড়া দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করাও সবসময় সম্ভব হচ্ছিল না। মনসবদারেরা বেতন না পেলে তাদের পক্ষেও ভালোভাবে ঘোড়সওয়ারের দেখাশোনা করা সম্ভব ছিল না, অর্থাৎ খাতায় কলমে হিসাবের সঙ্গে আসলে যা হচ্ছে তার তফাত বেড়েই চলেছিল। ঔরঙ্গজেবের সময় এই সমস্যা আরও বেড়েছিল।

ঔরঙ্গজেব মনসবদারেরা ভালোভাবে ঘোড়সওয়ারের ভরণপোষণ করতে না পারার ফলে সৈন্যবাহিনীর ক্ষমতা কমতে থাকে। এ ছাড়া ভালো জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে জায়গির হিসাবে ভালো জমি দেওয়া যাচ্ছিল না। ফলে সমস্যা আরও গভীর হয়েছিল। আয়ের পথ অনিশ্চিত হওয়ায় বেতনভুক দক্ষ সেনার ভরণপোষণে সম্রাট অপারগ হয়ে ওঠেন। ভালো জায়গির পাওয়ার জন্য জায়গিরদাররা ষড়যন্ত্র ও দলাদলি করতে থাকেন এর ফলস্বরূপ মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতি বিনষ্ট হয়। ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

(ঘ) সম্রাট ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে মুঘল সাম্রাজ্যের সামগ্রিক অবস্থা বিষয়ে তোমার মতামত কী?

উত্তর: ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে সাম্রাজ্য অনেক বড়ো হয়ে পড়েছিল এবং মনসব নিয়ে অভিজাতদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। এ ছাড়া সেই সময়ে মারাঠাদের মতো এক আঞ্চলিক শক্তির উত্থান হয়। এরা মুঘলদের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে। শিখদের সঙ্গে মুঘলদের সম্পর্কও তিক্ত হয়ে উঠেছিল। এতদিন ধরে মুঘলরা নিজেদের যে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেই ধারণায় আঘাত করা হয়। মুঘলদের বিরুদ্ধে জাঠ প্রতিরোধ ছিল একদিকে কৃষক বিদ্রোহ, অন্যদিকে একটি আলাদা গোষ্ঠী পরিচয়ে জাঠরা একজোট হচ্ছিল। মথুরার কাছে নারনৌল অঞ্চলে একদল কৃষক মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল। এরা ছিল সৎনামি নামে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষ। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে পাঠান উপজাতিরা মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। এ ছাড়া জায়গিরদারি ও মনসবদারি ব্যবস্থাতেও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। এবং সর্বোপরি ঔরঙ্গজেবের সময় থেকে কৃষি সংকটও বেড়ে গেছিল। তাই সামগ্রিকভাবে বলা যায় ঔরঙ্গজেবের আমল থেকেই শুরু হয়েছিল মুঘল সাম্রাজ্য পতনের সূচনা।

☛ সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর পেতে: Click Here
আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করো: Click Here
সমস্ত বিষয়ের উত্তর পেতে: Click Here

Class 7 History Chapter 8 Question Answer | মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট

Class 7 History Important Questions and Answers

সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস অষ্টম অধ্যায় মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট। সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের প্রশ্নগুলির উত্তর

Class-7 History Chapter-9 Question-Answer Class 7 History Class 7 History Chapter 8 Question Answer | মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট Capter 8 Question Answer | মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অষ্টম অধ্যায়ের অনুশীলনীর প্রশ্ন উত্তর
মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment