প্রবন্ধ রচনা চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা
চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা
ভূমিকা:
সভ্যতার আদি লগ্ন থেকেই খেলাধুলা জড়িয়ে গিয়েছে মানুষের জীবনের সঙ্গে। প্রথমদিকে যা ছিল সহজাত প্রবৃত্তি, আজ তাই হয়ে উঠেছে চারিত্রিক গুণাবলীর বিকাশের এক অন্যতম মাধ্যম। কবির ভাষায় তাই বলা যায়-
ছিল যে পরানের অন্ধকারে
এল সে ভুবনের আলোক পাড়ে।
খেলাধুলার প্রকৃতি:
খেলাধুলা হলো কোন বস্তু, ব্যক্তি বা বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশেষ কৌশলগত ক্রিয়া। এই খেলাধুলা নানা রকম হতে পারে- ফুটবল, ক্রিকেট, কবাডি, টেনিস, সাঁতার, খো খো, হকি , দৌড়, লাভ ইত্যাদি।
এসব খেলাধুলার কিছু কিছু অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত প্রাঙ্গনে, কখনো বা ঘরে আবদ্ধ স্থানে। তা কখনো সংঘটিত হয় সংঘবদ্ধভাবে কখনোবা এককভাবেও।
চরিত্র গঠনে খেলাধুলা:
খেলাধুলা ছাত্র জীবনে বিশেষ কার্যকরী ব্যবস্থা। জীবনের শুরু যেহেতু শিশুকাল থেকে, সেহেতু এই সময় থেকেই খেলাধুলা শিশুর চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে এবং তার মধ্যে নানান গুণাবলীর প্রকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। যেমন-
ক) জাতীয় ঐক্যবোধ সৃষ্টি:
সঙ্ঘবদ্ধ খেলার ক্ষেত্রে নানান স্থানের, নানান ভাষাভাষীর খেলোয়াররা একসঙ্গে খেলে বলে তাদের মধ্যে জেগে ওঠে জাতীয় ঐক্যবোধ। সেই ঐক্যবোধ পরবর্তী সমাজ জীবনে খেলোয়ারদের পথে চালিত করে।
খ) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টি:
একটি খেলার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের খেলোয়াড়রা বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে একসঙ্গে খেলতে পারে। তার ফলে খেলোয়ারদের মধ্যে জেগে ওঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টি। জাত পাতের গোঁড়ামিও সেভাবে দূর হতে পারে।
গ) ভাতৃত্ববোধ সৃষ্টি:
খেলাধুলা হতে পারে আন্তদেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এই দুই ধরনের। উভয় ক্ষেত্রেই একসঙ্গে খেলার জন্য ভাতৃত্ববোধ যেমন জেগে ওঠে, তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সৃষ্টি হতে পারে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ ও প্রীতির বাঁধনে তখন যেমন বাধা পড়ে খেলোয়ারা, তেমনি বাধা পড়ে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা।
ঘ) নিয়মানুবর্তিতা সৃষ্টি:
খেলাধুলা করার সময় মাঠে ঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়া কিংবা অনুশীলনে, খেলার সময় বিশেষভাবে শৃঙ্খলা বদ্ধ হয়ে খেলা এবং খেলার নানান নিয়মকানুন পালন করার ভেতর দিয়ে খেলোয়ার রা পরবর্তী জীবনে সুশৃংখল ও মানববর্তী হয়ে উঠতে পারে।
সমস্ত রচনা দেখতে: Click Here
ঙ) একাগ্রতার গুন সৃষ্টি:
ক্রিকেট দাবা প্রভৃতি খেলায় বিশেষ মনোযোগ দরকার হয়, মনোযোগ দরকার হয় আরো অনেক খেলাতেও। সেভাবে খেলায় মনোযোগ দিতে দিতে খেলোয়াড়দের মধ্যে সৃষ্টি হয় একাগ্রতার গুণ।
চ) প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি:
খেলাধুলার সঙ্গে মিশে থাকে হারজিতের দিক । জেতার জন্য শ্রেষ্ঠ হবার জন্য কিংবা দলকে লড়াইয়ে ফেরবার জন্য তাই দুই প্রতিযোগী বা দু দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। তা থেকে খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব এবং হার না মানার মানসিকতা গড়ে ওঠে।
ছ) উদার মানসিকতা সৃষ্টি:
খেলার মাঠে সমবেত ভাবে খেলার সময় খেলোয়াড়রা নিজের স্বার্থের কথা সাধারণতভাবে না। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক আদান-প্রদানি তাদের কাছে বড় হয়ে ওঠে।
তখন যেন তাদের মন গভীর গোপনে বলে ওঠে- খুলে দাও দার/নীল আকাশ করো অবারিত; স্বাভাবিকভাবেই খেলোয়াড়দের মন আকাশের মত উদার হবার শিক্ষা পায় খেলাধুলার ভেতর দিয়ে।
উপসংহার:
স্বপ্নকে ঘিরে বড় হয় আগামী দিনের নাগরিকরা। সুনাগরিক হবার জন্য এসব গুণাবলীর দরকার হয়, খেলাধুলা সেই গুণাবলীর অনেকগুলোই খেলোয়াড়দের মনের মধ্যে হিসেবে করে দেয়। খেলাধুলার ভেতর দিয়ে শরীর চর্চা সেই ভিতকে আরো দৃঢ় হতে সাহায্য করে।
Subscribe Our YouTube Channel: Click Here
Tags: চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা