প্রবন্ধ রচনা একটি গাছ একটি প্রাণ

একটি গাছ একটি প্রাণ

ভূমিকা:

গাছ আমাদের প্রকৃত বন্ধু। সে অচল, মুখ, নিরব, নিথর কিন্তু তাকে ছাড়া আমাদের চলে না। আমাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে গাছ ছাড়া, মানব জীবনের তুষ্টি ও পুষ্টি স্থিতি ও শক্তি সেই গাছ বন্ধুরই অবদান।
গাছ মানুষের প্রাণশক্তির অন্যতম উৎস। তাই একটি গাছ, একটি প্রাণ, কথাটি স্লোগান নয়, এটি জীবনের চরম সত্য।

মানব সভ্যতা ও বৃক্ষ:

প্রকৃতির শান্ত সুনিবিড় বননের স্নেহের কোলেই মানব সভ্যতার সূচনা। ভারতবর্ষে আর্য সংস্কৃতি ও সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশ অরণ্য ঘেরা তপোবনতলেই সূচিত হয়েছিল। গাছপালা তরুলতার সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধ তখন গড়ে উঠেছিল। আত্মীয়র মত, গাছপালার সঙ্গে মানুষের এই একান্ততা এই প্রীতির সম্পর্ক নিছক আবেগ ছিল না। ছিল বাস্তব সত্য, কারণ গাছপালা মানুষের জীবনধারণের সঙ্গে একান্ত অপরিহার্য।

বন ধ্বংসের কারণ:

আজ অকৃতজ্ঞ মানুষ সমাজ বিশ্বব্যাপী অরণ্য নির্বিচারে ধ্বংস করেছে। বন কেটে বসতি গড়া, মহানগরের পত্তন করা। কলকারখানা, শিল্প কেন্দ্র স্থাপন করা, জ্বালানি, গৃহ নির্মাণ, আসবাবপত্র নির্মাণ আধুনিক মানুষের রকমারি প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে অরণ্যভূমি আজ নিঃস্ব। দেশে দেশে শিল্প স্থাপনের নামে, নগর উন্নয়নের নামে বন ধ্বংস হচ্ছে। অন্যদিকে চোরাচালানকারীরা গাছ কেটে বন সাফ করে দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে আজ অরণ্যনিধনের অসম প্রতিযোগিতা চলছে।

বন ধ্বংসের বিস্ময় ফল:

বন ধ্বংস আর মানুষের আত্মহননে কোন তফাৎ নেই, নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসের ফলে প্রাণী জীবনে নেমে আসছে সংকট। পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশে দূষিত বায়ুর পরিমাণ বাড়ছে। ঊষর বায়ু পৃথিবীর বিভিন্ন শ্যামল অঞ্চল গ্রাস করছে। বড় ধ্বংসের ফলে জলবায়ুতে পরিবর্তন ঘটছে। বর্ষা কমেছে, গ্রীষ্ম হচ্ছে দীর্ঘতর, বিধ্বংসী বন্যার তান্ডবলীলা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

পৃথিবীর অবস্থা:

আজ পরিবেশ দূষণের ফলে প্রাণিজগত মৃত্যুর মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। কলকারখানার ও যানবাহনের কারণে বায়ুতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড বিষে পৃথিবীর আজ বিষাক্ত। অথচ এই বিষ গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে। কেবল গাছের, কিন্তু আজ তাদেরই অস্তিত্ব বিপন্ন, অজ্ঞান অন্ধ মানুষ গাছের মূলে মূলে নয়, যেন নিজের পায়েই কুড়ুল চালাচ্ছে। বায়ু দূষণের ফলে দুরারোগ্য ক্যান্সার সহ নানান প্রাণবিধ্বংসী ব্যাধির কবলে বিশ্বের অসংখ্য মানুষ আজ মৃত্যু পথযাত্রী।

প্রতিকার:

মানব জীবনকে রক্ষা করতে, নিরাপদ করতে মানব সভ্যতাকে নির্বিঘ্ন করতে বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজন খুবই জরুরী। মরু বিজয়ের কেতন ওরাতে হবে, অরণ্য সংরক্ষণের জন্য চালু হওয়া বনমহোৎসব কে বেশি করে কার্যকর করে তুলতে হবে। তাই ক্লাবে ক্লাবে, পাড়ায় পাড়ায়, অফিসে অফিসে সর্বত্র বৃক্ষরোপণের জন্য উন্মাদনা জেগে উঠুক। বৃক্ষ জীবন ও মানব জীবন বন্ধুর মতো এগিয়ে চলুক বিকাশের দিকে, যেন কবির মতোই বিশ্বের বিশ্বের মানুষ বলে উঠতে পারে- যেদিকে তাকাই জনপ্রাণী নেই, শুধু সবুজের মেলা।

উপসংহার:

কর্তব্য, বনমহোৎসব, বৃক্ষরোপণ উৎসব, যেন উৎসব পালনের মধ্যে দিয়েই সীমাবদ্ধ না থাকে আমাদের উদ্দম। একদিন ঘটা করে বৃক্ষরোপণ করে সারা বছর আর গাছ লাগানোর কথা মনে রাখলাম না, অথবা রোপিত বৃক্ষগুলির পরিচর্যা করলাম না। তাতে বনমোৎসব পালনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। সুতরাং, সবুজ যাওনের জন্য চাই মানুষের সক্রিয় ভূমিকা।

👉 সমস্ত রচনা দেখতে: Click Here
Subscribe Our YouTube Channel: Click Here

Leave a Comment

CLOSE