এখানে বিভিন্ন মিশ্রণকে কীভাবে পৃথক করবে তার পদ্ধতি আলোচনার করা হলো।
প্রশ্ন ১: কী ধরনের মিশ্রণ পৃথক করতে সেপারেটরি ফানেল ব্যবহার করা হয়? উদাহরণ দাও।
উত্তর: সেপারেটরি ফানেল ব্যবহার করে মূলত অমিশ্রণীয় তরল মিশ্রণ পৃথক করা হয়। এই ধরনের মিশ্রণের বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
(i) মিশ্রণের উপাদান দুটি তরল পরস্পরের সাথে অমিশ্রণীয় হবে।
(ii) মিশ্রণের তরলগুলির মধ্যে ঘনত্বের পার্থক্য থাকতে হবে।
(iii) মিশ্রণের উপাদান তরলগুলির মধ্যে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হবে না।
উদাহরণ:
তেল ও জলের মিশ্রণ।
ক্লোরোফর্ম ও জলের মিশ্রণ।
এই ধরনের মিশ্রণে সেপারেটরি ফানেল ব্যবহার করে দুইটি তরল তাদের ঘনত্বের পার্থক্যের ভিত্তিতে সহজেই পৃথক করা যায়।
প্রশ্ন ২: পরস্পর মেশে না এমন দুটি তরলের মিশ্রণ থেকে উপাদান তরল দুটিকে কীভাবে পৃথক করবে?
উত্তর: পরস্পর মেশে না এমন দুটি তরলের মিশ্রণ থেকে উপাদান তরল দুটিকে বিয়োজী ফানেলের (সেপারেটরি ফানেল) সাহায্যে পৃথক করা যায়।
পদ্ধতি:
I. প্রথমে একটি স্ট্যান্ডে একটি বিয়োজী ফানেল স্থাপন করা হয়।
II. ফানেলে পরস্পর অমিশ্রণীয় তরল দুটির মিশ্রণ ঢালা হয়।
III. ফানেলটি কিছুক্ষণ স্থিরভাবে রেখে দেওয়া হয়, যাতে ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে মিশ্রণটি দুটি স্তরে পৃথক হয়ে যায়।
বেশি ঘনত্বের তরলটি ফানেলের নীচের স্তরে অবস্থান করে।
কম ঘনত্বের তরলটি ফানেলের উপরের স্তরে থাকে।
IV. ফানেলের নিচে একটি কনিক্যাল ফ্লাস্ক স্থাপন করা হয় এবং ফানেলের স্টপকক্ ধীরে ধীরে খোলা হয়।
V. বেশি ঘনত্বের তরলটি ফানেলের নল দিয়ে বের হয়ে কনিক্যাল ফ্লাস্কে জমা হয়।
VI. সমস্ত বেশি ঘনত্বের তরল বের হয়ে গেলে স্টপকক্ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
VII. অপেক্ষাকৃত কম ঘনত্বের তরলটি ফানেলের মধ্যে থেকে যায়।
উদাহরণ:
তেল ও জলের মিশ্রণ।
ক্লোরোফর্ম ও জলের মিশ্রণ।
বিয়োজী ফানেলের মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে উপাদান তরলগুলোকে কার্যকরভাবে পৃথক করা যায়।
প্রশ্ন ৩: পাতন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত শীতকটির নীচ দিয়ে ঠান্ডা জল ঢুকিয়ে উপর দিয়ে বের করা হয় কেন?
উত্তর: গরম জল ঠান্ডা জলের তুলনায় হালকা। পাতন প্রক্রিয়ার সময় যে শীতক বা কনডেনসার ব্যবহৃত হয়, তার নীচের পার্শ্বনল দিয়ে ঠান্ডা জল প্রবেশ করে। ঠান্ডা জল উত্তপ্ত বাষ্পের সংস্পর্শে এসে গরম হয়ে উপরের পার্শ্বনল দিয়ে বের হয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে ঠান্ডা জল বেশি সময় ধরে তাপ গ্রহণ করার সুযোগ পায়।
অন্যদিকে, যদি ঠান্ডা জল উপরের পার্শ্বনল দিয়ে প্রবাহিত হয়, তবে জলের অপব্যবহার বেশি হয়। সেই কারণে শীতকটির নীচের পার্শ্বনল দিয়ে ঠান্ডা জল প্রবাহিত করে উপরের দিকে বের করা হয়।
প্রশ্ন ৪: জল ও ইথাইল অ্যালকোহলের মিশ্রণকে আংশিক পাতন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ পৃথক করা যায় না কেন?
উত্তর: জল ও ইথাইল অ্যালকোহলের মিশ্রণ একটি অ্যাজিওট্রোপিক মিশ্রণ। এটি 78.4°C তাপমাত্রায় একসাথে পাতিত হয়। আংশিক পাতন প্রক্রিয়ায়, চলার শেষ পর্যায়ে 95.6% ইথাইল অ্যালকোহল এবং 4.4% জল পাওয়া যায়। অ্যাজিওট্রোপিক মিশ্রণ হওয়ার কারণে, পুরো মিশ্রণটি একসাথে পাতিত হওয়ার জন্য তাপমাত্রা এবং সংমিশ্রণের একটি নির্দিষ্ট অনুপাত থাকে, যা সম্পূর্ণ পৃথককরণে বাধা দেয়। এই কারণে, জল এবং ইথাইল অ্যালকোহলের মিশ্রণকে আংশিক পাতন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ পৃথক করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ৫: আংশিক পাতনের ক্ষেত্রে পাতন স্তম্ভ ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর: আংশিক পাতনের ক্ষেত্রে পাতন স্তম্ভ ব্যবহৃত হয় কারণ এটি উর্ধ্বমুখী বাষ্প এবং নিম্নমুখী ঘনীভূত তরলের মধ্যে বাধার সৃষ্টি করে, ফলে বাষ্পের ঘনীভবনের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়। পাতন স্তম্ভ যত দীর্ঘ হয়, পৃথককরণ পদ্ধতি তত ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। এতে বাষ্প এবং তরলের মধ্যে আরও বেশি সময় যোগাযোগ ঘটে, যার ফলে দ্রব্যগুলির পৃথককরণ আরও কার্যকরী হয়।
প্রশ্ন ৬: পেপার ক্রোমাটোগ্রাফি বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ক্রোমাটোগ্রাফি শব্দটি গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে, যেখানে ‘ক্রোমোস’ (Chromos) অর্থ রং (Colour) এবং ‘গ্রাফি’ (Graphy) অর্থ লেখা (Writing)। পেপার ক্রোমাটোগ্রাফি হল একটি পদ্ধতি যা কোনো মিশ্রণ থেকে তার উপাদান পৃথক, শনাক্ত এবং বিশুদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কখনও কখনও, এই পদ্ধতির মাধ্যমে উপাদানের পরিমাণও নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
ক্রোমাটোগ্রাফি পদ্ধতিতে একটি মিশ্রণকে দুটি পৃথক দশায় বিভক্ত করা হয়:
(i) নিশ্চল দশা (Stationary phase) – যা সাধারণত পেপার বা অন্য কোনো উপাদান হিসেবে থাকে।
(ii) চলমান দশা (Mobile phase) – এটি হলো তরল বা গ্যাস যা মিশ্রণের উপাদানগুলিকে পেপারের উপর দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যায়।
এই পদ্ধতিতে মিশ্রণের উপাদানগুলো বিভিন্ন গতিতে চলমান দশার মাধ্যমে পেপারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে বিভিন্ন রঙের উপাদান আলাদা হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, কালো কালি ব্যবহৃত হলে, কালি থেকে বিভিন্ন রঙের উপাদান পৃথক হয়ে যায়, যা পেপার ক্রোমাটোগ্রাফির মাধ্যমে দেখা যায়।
উদাহরণ: কালো কালির উপাদানগুলির পৃথককরণ একটি সাধারণ পেপার ক্রোমাটোগ্রাফি উদাহরণ হতে পারে।
প্রশ্ন ৭: দুধ থেকে কীভাবে ক্রিম বা সর তোলা হয়?
উত্তর: দুধ থেকে ক্রিম বা সর তোলার জন্য সেন্ট্রিফিউজ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে, দুধকে একটি সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রে রাখা হয় এবং যন্ত্রটি দ্রুত ঘোরানো হয়। এর ফলে মিশ্রণটির মধ্যে ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণনের কারণে, দুধের কম ঘনত্বের কণাগুলি উপরে উঠে থাকে এবং বেশি ঘনত্বের কণাগুলি তলদেশে চলে যায়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুধের ক্রিম বা সর আলাদা হয়ে যায়।
বিভিন্ন মিশ্রণকে কীভাবে পৃথক করবে
প্রশ্ন ৮: তোমাকে কিছুটা লোহার গুঁড়ো, বালি ও নুনের মিশ্রণ দেওয়া হল। তুমি কীভাবে এদের পৃথক করবে?
উত্তর: লোহার গুঁড়ো, বালি এবং নুনের মিশ্রণ থেকে উপাদানগুলিকে পৃথক করার জন্য আমরা চুম্বক এবং জল দ্রবণীয়তার ধর্ম ব্যবহার করতে পারি।
I. লোহার গুঁড়ো পৃথক করা:
সর্বপ্রথম একটি শক্তিশালী চুম্বক ব্যবহার করা হবে। চুম্বকটি মিশ্রণের উপর দিয়ে ভালোভাবে ঘোরানো হলে লোহার গুঁড়ো চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে চুম্বকের গায়ে আটকে যাবে এবং বাকি বালি ও নুন আলাদা হয়ে যাবে।
II. নুন দ্রবীভূত করা:
অবশিষ্ট বালি ও নুনের মিশ্রণকে একটি বিকারে নিয়ে জল যোগ করা হবে। নুন জলতে দ্রবীভূত হয়ে যাবে, কিন্তু বালি তলদেশে পড়ে যাবে।
III. বালি আলাদা করা:
মিশ্রণটি ফিলটার পেপারের মাধ্যমে পরিস্রুত করা হলে, ফিলটার পেপারে বালি জমা হবে এবং নুনের জলীয় দ্রবণ ফিলটার পেপারের মধ্য দিয়ে বের হয়ে যাবে।
IV. নুন পৃথক করা:
নুনের জলীয় দ্রবণকে পাতন পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হলে, অবশেষে নুন পাত্রে পড়ে যাবে।
প্রশ্ন ৯: বালি ও কপূরের মিশ্রণকে কীভাবে পৃথক করবে?
উত্তর: বালি ও কপূরের মিশ্রণকে পৃথক করার জন্য উর্ধ্বপতন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
I. প্রথমে মিশ্রণ প্রস্তুত করা:
একটি পোর্সেলিন বেসিনে কপূর ও বালির মিশ্রণ নেওয়া হবে এবং এই বেসিনটি বালিগাহের উপর রাখা হবে। বালিগাহটি ত্রিপদ স্ট্যান্ডে স্থাপন করা হবে।
II. ফানেল ও তাপ প্রয়োগ:
ফানেল উপুড় করে বেসিনের মিশ্রণটি ঢাকা দিয়ে ফানেলের নলটি তুলো দিয়ে বন্ধ করা হবে। ফানেলের বাইরের গায়ে ভিজে ফিলটার কাগজ জড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর বুনসেন বার্নার দিয়ে বালিগাহটি উত্তপ্ত করা হবে।
III. কপূর আলাদা করা:
উত্তপ্ত করার ফলে কপূর ঊর্ধ্বপাতিত হয়ে ফানেলের গায়ে কঠিন অবস্থায় জমা হবে এবং বেসিনে পড়ে থাকবে বালি।
IV. কপূর সংগ্রহ করা:
ফানেলটি সরিয়ে ফেলা হলে, ফানেলের গায়ে জমা কপূর একটি পাত্রে সংগ্রহ করা হবে।
প্রশ্ন ১০: চিনির জল ও কেরোসিনের মিশ্রণ থেকে উপাদানগুলিকে পৃথক করবে কীভাবে?
উত্তর: চিনির জল এবং কেরোসিন দুটি পরস্পর অমিশ্রণীয় তরল পদার্থ হওয়ায় এই অসমসত্ত্ব মিশ্রণ থেকে উপাদানগুলি পৃথক করতে বিয়োজী ফানেল ব্যবহার করা হয়।
I. বিয়োজী ফানেলে মিশ্রণ রাখা:
প্রথমে মিশ্রণটিকে একটি বিয়োজী ফানেলে নিয়ে কিছু সময় স্থিরভাবে রাখা হয়। কিছু সময় পরে মিশ্রণটি দুটি স্তরে বিভক্ত হয়ে যায়, যেখানে বেশি ঘনত্বের চিনির জল নীচে এবং কম ঘনত্বের কেরোসিন উপরে অবস্থান করে।
II. চিনির জল আলাদা করা:
এরপর ফানেলের স্টপকক খুলে বেশি ঘনত্বের চিনির জল বের করে নেওয়া হয়। ফানেলে শুধুমাত্র কেরোসিন থাকে।
III. চিনির জল থেকে চিনি ও জল পৃথক করা:
প্রাপ্ত চিনির জলকে সাধারণ পাতন পদ্ধতির সাহায্যে আলাদা করা হয়, যেখানে জল বাষ্পীভূত হয়ে যাবে এবং চিনি থাকবে।
আরও পড়ো: Conversation about Exam Preparation
বিভিন্ন মিশ্রণকে কীভাবে পৃথক করবে সেই সম্পর্কে আলোচনা।