কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় ভাইফোঁটা। কার্তিক মাসে ধনতেরাস থেকে দীপাবলীর যে পাঁচ দিনব্যাপী শুভদিনের সূত্রপাত হয় ভাইফোঁটা দিয়ে সেটি শেষ হয়। এই পাঁচ দিন আমাদের সনাতন ধর্মের তিথি অনুসারে অত্যন্ত শুভ। প্রত্যেকদিন কিছু না কিছু অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। ভাইফোঁটা আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে অত্যন্ত পবিত্র একটি তিথি, ভাই বোনেদের জন্য। এটি ভাই ও বোনের ভালোবাসার প্রতীক।
ভাইফোঁটা দেওয়ার সঠিক নিয়ম:
ভাইফোঁটা অনুষ্ঠান শুধুমাত্র যে বাঙালীদের মধ্যেই আছে তা নয়। অবাঙালী হিন্দুদের মধ্যেও ভাইফোঁটা অনুষ্ঠিত হয় যাকে ভাইদুজ বলে।
নেপালিদের মধ্যেও রয়েছে যাকে বলে ভাই টিকা। এই অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত শুভ এবং জনপ্রিয়। প্রতিটি ঘরে ঘরে এই অনুষ্ঠান পালিত হয় যাদের ঘরে ভাই বোন রয়েছে দিদি বা দাদা রয়েছে।
ভাই ফোঁটার শুভদিনে বোনেরা চন্দন কাঠে জল দিয়ে ঘষে ঘষে চন্দন তৈরি করে। তারপর দই মিশিয়ে সেটি বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল ব্যবহার করে মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে ভাইয়ের কপালে তিনবার ফোঁটা দেয়।
ভাইফোঁটা ২০২৩ সময়সূচী:
▣ দ্বিতীয়া মুহূর্ত শুরু: ১৪ই নভেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার দুপুর ২ টা ২৮ মিনিট থেকে।
▣ দ্বিতীয়া মুহূর্ত শেষ: ১৫ই নভেম্বর ২০২৩ বুধবার দুপুর ১ টা ৫৪ মিনিটে।
▣ ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার সবথেকে শুভ সময় হল ১৫ ই নভেম্বর বুধবার সকাল ৫ টা ৫৪ মিনিট থেকে দুপুর ১ টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত।
ভাইফোঁটার মন্ত্র:
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা;
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।
যমুনার হাতে ফোটা পেয়ে যম হল অমর,
আমার হাতের ফোঁটা পেয়ে আমার ভাই হোক অমর।
বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলেই ভাইফোঁটা দেওয়া হয় কেন?
এই রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এমনিতে ডানহাত কে বেশি পবিত্র মনে করা হয়। কিন্তু বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলেই ফোঁটা দেওয়া হয় কেন?
সনাতন ধর্মের এই রীতির পিছনে মনে করা হয় কনিষ্ঠ বা কড়ে আঙুল মহাশূন্যের প্রতীক। আর সেই আঙুলে প্রকৃতি স্বরূপা নারী ফোটা দেন তার ভাই বা দাদার মঙ্গল কামনায়।
শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে মানুষের হাতের পাঁচটি আঙুল পঞ্চভূত যথা ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরূত্ ও ব্যোম -এর প্রতীক।
শেষের ব্যোম হল কড়ে আঙুল। ব্যোম অর্থাৎ মহাশূন্য।
উদার ভালোবাসার প্রতীক কড়ে আঙুল। পবিত্র ভাইফোঁটার উৎসবের জন্য এই ব্যাপারে শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে ভাই এবং বোনের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা যেন মহাশূন্যের মতো অসীম ও অনন্ত হয়, সেই জন্য এই আঙুলের ব্যবহার করা হয়।
ভাইফোঁটার জন্য কি কি উপকরণ লাগে?
ভাইফোঁটার জন্য এক একটি বাড়িতে একেক রকম নিয়ম রয়েছে। তবে যে উপকরণগুলি অত্যাবশ্যকীয় প্রধান প্রধান উপকরণ সেগুলি হল-
ধান, দূর্বা ঘাস, চন্দন, চুয়া (দশকর্মার দোকানে পাবেন), কার্তিক দীপান্বিতা অমাবস্যার কাজল, ধূপকাঠি, মধু, ঘি এর প্রদীপ, দই, কাঁচা হলুদ, শঙ্খ, নাড়ু এবং মিষ্টি।
ভাইফোঁটার অঙ্গ শুধু ফোঁটা দেওয়া নয়, সেইসঙ্গে ভুরিভোজ এবং প্রচুর উপহার রয়েছে। বড় ভাইদের থেকে উপহার পাওয়া কিংবা দিদির থেকে উপহার নেওয়ার প্রথা ভাইফোঁটাতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার ৮টি বৈজ্ঞানিক উপায়
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা
আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
ভাইফোঁটা ২০২৩ সময়সূচী | ভাইফোঁটা দেওয়ার সঠিক নিয়ম | ভাইফোঁটার মন্ত্র | ভাইফোঁটার জন্য কি কি উপকরণ লাগে?