রাত ১২ টা বেজে গেল। এপাশ ওপাশ ঘুরছি, কিন্তু ঘুম নেই। মাঝে মাঝে হাতে মোবাইল টা নিয়ে একটু সোশ্যাল মিডিয়া দেখছি। দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা ২ টার ঘরে। শরীর ক্লান্ত, ভাবছি ঘুম আসবে। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। আপনার সাথে কি এই রকমটা হয়? চিন্তা করবেন না। আজ আমরা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। আপনার অবশ্যই উপকারে লাগবে।
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায়:
১. ঘুমানোর আগে ক্যাফিনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন-
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার প্রথম উপায় হল ক্যাফিনযুক্ত পানীয় যেমন কফি, চা, চকলেট এবং নিকোটিন ত্যাগ করা। কারণ ক্যাফিন খুব দ্রুত আমাদের শরীরে শোষিত হয় এবং মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মস্তিষ্ককে ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে সক্রিয় রাখে এবং আমাদের নিদ্রা বিঘ্নিত করে।
২. ঘুমোনোর দুই ঘন্টা আগে রাতের খাবার সেরে ফেলুন-
রাত্রে খুব বেশি পরিমাণ খাবার খাবেন না এবং ঘুমোতে যাওয়ার দুই ঘন্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নেবেন। খাবার খেয়েই শুয়ে পড়লে খাদ্য উপাদান পাকস্থলী থেকে পুনরায় খাদ্য নালীর দিকে চলে আসে। এর ফলে বদহজম ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হয় এবং ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
৩. বই পড়ুন-
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার আর একটি দারুন উপায় হলো বই পড়া। বই পড়া আমাদের দুশ্চিন্তা ও সাংসারিক চিন্তা-ভাবনা কমায় এবং মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে। তাই ঘুমানোর আগে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আরও পড়ুন: পটাশিয়াম যুক্ত খাবার কি কি?
৪. টিভি বা মোবাইল পরিত্যাগ করুন-
ঘুমোনোর আগে স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা টিভি দেখবেন না। কারণ এগুলি থেকে নীল আলোকরশ্মি নির্গত হয় যা আমাদের দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে দেয় না।
৫. আরামদায়ক বিছানা-
আরামদায়ক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিছানা আমাদের গভীর ঘুমের জন্য অত্যন্ত জরুরী। তুলোর বালিশ ব্যবহার করবেন এবং সর্বদা মশারি খাটিয়ে ঘুমোবেন। এতে বাইরের কীটপতঙ্গ আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না।
৬. ক্লান্তি বোধ করলে ঘুমিয়ে পড়ুন-
যদি আপনি ক্লান্তি বোধ করেন তাহলে দ্রুত শুয়ে পড়ুন। জোর করে জেগে থাকবেন না। কারণ একবার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে সহজে ঘুম আসে না।
৭. নির্দিষ্ট টাইম টেবিল:
ঘুমোনোর জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় ঠিক করুন এবং নিয়মিত ওই একই সময়ে শুয়ে পড়ুন। তাহলে আপনার দ্রুত ঘুম আসবে এবং ঘুমটাও গভীর হবে।
৮. দিনের বেলায় বেশিক্ষণ ঘুমোবেন না-
আমাদের অনেকের অভ্যাস দুপুরবেলা ২-৩ ঘন্টা ঘুমোনোর। কিন্তু এটি রাত্রে দ্রুত ঘুমোনের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। দিনের বেলা আমাদের Power Nap প্রয়োজন। কিন্তু সেটা হবে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের। দিনেরবেলা কখনই ৩০ মিনিটের বেশি ঘুমানো উচিত নয়।
আরও পড়ুন: কিডনি ড্যামেজের ১১ টি লক্ষণ
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপকারিতা:
১. দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।
২. মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা কমে।
৩. স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৪. গ্যাস, বদহজম ইত্যাদি সমস্যা দূর করে।
৫. দৈনিক কাজে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
৬. খিটখিটে মেজাজ দূর হয়।
রাতে দ্রুত ঘুম না হলে করনীয়:
১. ঘুমোনোর আগে চা, কফি, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।
২. রাতের খাবার ২ ঘন্টা আগেই খেয়ে নিন।
৩. ঘুমোনোর আগে মোবাইল দেখা বন্ধ করুন।
৪. রাত্রে অল্প পরিমাণে খাবেন।
৫. ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরম দুধ পান করুন।
৬. কোনো গল্প বা কবিতার বই পড়ুন।
রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম:
রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম হলো ইনসমনিয়া (Insomnia)।
আরও পড়ুন: আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
FAQs: Frequently Asked Questions
১. কি খেলে দ্রুত ঘুম আসে?
উত্তর: হালকা গরম দুধ, পাকা কলা, মধু, যেকোনো ধরণের বাদাম, চেরিফল – এই খাবারগুলি খেলে দ্রুত ঘুম আসবে।
২. একজন মানুষের প্রতিদিন কত ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন?
উত্তর: একজন মানুষের নিয়মিত একটানা ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।
৩. কি খেলে রাতে ঘুম আসে না?
উত্তর: রাতে ঘুমোনোর আগে চা, কফি, নিকোটিন, কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে দ্রুত ঘুম আসে না।
৪. রাতে দেরিতে ঘুমালে কি হয়?
উত্তর: রাতে দেরিতে ঘুমালে সারাদিনের কাজে মন বসে না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, সারাক্ষণ নিস্তেজ দেখায়, মাথা যন্ত্রণা ও হজমের সমস্যা হয়। রাতে নিয়মিত দেরিতে ঘুমোনের কারণে নিদ্রাহীনতা বা Insomnia রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
আরও পড়ুন: পেটের মেদ কমানোর উপায়