বাসক পাতার উপকারিতা
বাসকের ভেষজ গুনের কথা অথর্ববেদে উল্লেখ আছে। বাসক গাছের পাতা, ছাল, শিকড় এবং ফুল গত ২০০০ বছর ধরে ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখানে আমরা বাসকের উপকারিতা ও ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করবো।
বাসক পাতার পুষ্টিগুণ:
পুষ্টিগুণ | পরিমাণ |
কার্বোহাইড্রেট | 16.4% |
ফ্যাট | 1.6% |
প্রোটিন | 6.5% |
ফাইবার% | 6.4% |
পটাসিয়াম | 31.15 গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | 67.99 গ্রাম |
আয়রন | 0.70 গ্রাম |
কপার | 0.06 গ্রাম |
দস্তা | 0.06 গ্রাম |
ক্রোমিয়াম | 0.04 গ্রাম |
শক্তি | 106 ক্যালোরি |
বাসক পাতার উপকারিতা:
সর্দি-কাশি:
ক্রমাগত সর্দি ও কাশির কারণে ফুসফুস অবরুদ্ধ হয়ে আমরা অনেক সময় অস্বস্তি অনুভব করি। এই সময় বাসক পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। অল্প মধুর সাথে বাসকের পাতার রস মিশিয়ে খেলে তা গলায় প্রশান্তিদায়ক কাজ করে। কারণ বাসক পাতার রসে উপস্থিত উপাদানগুলি বুকে কফ জমতে দেয় না। কাশির সিরাপগুলিতে প্রধান উপাদান হিসাবে বাসক পাতার রস ব্যবহার করা হয়।
হাঁপানি এবং ব্রংকাইটিস:
বাসক পাতায় দুটি প্রধান অ্যালকালয়েড- ভ্যাসিসিনোন ও ভ্যাসিসিন থাকে। এগুলি হাঁপানি এবং ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। বাসক পাতায় ব্রঙ্কো-ডাইলেটরি বৈশিষ্ট্য থাকে, যা ফুসফুসের শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফকে তরলে পরিণত করে এবং দ্রুত বের করে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: থানকুনি পাতার উপকারিতা
ক্ষত নিরাময়:
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাসক পাতার রস শরীরের ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করলে ক্ষত নিরাময়ের হার অনেকটাই বেড়ে যায়। ত্বকের কাটা বা ফোঁড়াতে বাসক পাতার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করলে জ্বালা ও ফোলাভাব কমে এবং মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
যক্ষ্মা প্রতিরোধ:
বাসক পাতায় ভ্যাসিসিন অ্যালকালয়েড, ব্রোমহেক্সিন ও অ্যামব্রোক্সল থাকে। এই বায়োঅ্যাকটিভ যৌগগুলি যক্ষ্মার জীবাণুর (tubercle bacilli) বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের ধ্বংস করে। তাই, যক্ষ্মা নিরাময় থেরাপিতে বাসক পাতা খুব কার্যকরী।
আমাশয় রোধ:
বাসক পাতার রস আমাশয়ের প্রভাব উপশম করতে পারে।
বাসক পাতার ব্যবহৃত অংশ:
বাসক গাছের পাতা, ছাল, শিকড় এবং ফুল গত ২০০০ বছর ধরে ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম:
প্রথমে ৮-১০ টি বাসক পাতা ভালো করে ধুয়ে বেঁটে নিতে হবে। তারপর তাতে জল মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ছাকুনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। তাতে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এখানে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। এটি কোনো পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। কোনো কিছু গ্রহণ করার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। অন্যথায় আমরা কোনো মতেই দায়ী থাকবো না। |
বাসক পাতার উপকারিতা:
১. বাসক পাতার রস সর্দি কাশির সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
২. কফ জনিত শ্বাসকষ্ট দূর করে।
৩. খোসা-পাঁচড়া উপশমে সাহায্য করে।
৪. বাসক পাতার রস চামড়ার রং উজ্জ্বল করে।
৫. বাসক পাতা পানীয় জল জীবাণু মুক্ত করে।
আরও পড়ুন: তুলসী পাতার উপকারিতা
বাসক পাতার অপকারিতা:
১. অত্যাধিক পরিমাণে বাসক পাতা খেলে বমিভাব, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এটা নির্দিষ্ট পরিমানেই গ্রহণ করা উচিত।
২. গর্ভবতী মহিলাকে বা শিশুকে বাসক পাতা খাওয়ানোর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
৩. বাসক পাতা খাওয়ার পর কারও ক্ষেত্রে অ্যালাৰ্জিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তারা অবশ্যই এটা নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
যদিও বাসক পাতার তেমন কোনো অপকারিতা নেই তবুও বাসক পাতা গ্রহণের পূর্বে উপরিউক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
আরও পড়ুন: নিম পাতার উপকারিতা
বাসক পাতা গাছের ছবি:
FAQs: Frequently Asked Questions
প্রশ্ন: বাসক পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম কি?
উত্তর: বাসক পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম Justicia adhatoda
প্রশ্ন: বাসক পাতার ইংরেজি নাম কি?
উত্তর: বাসক পাতার ইংরেজি নাম Malabar nut
প্রশ্ন: বাসক পাতা কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: বাসক পাতা ভারতে প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। এছাড়াও হিমালয়ের পাদদেশে, শ্রীলঙ্কা, বার্মা এবং মালয়েশিয়াতে বাসক পাতার সন্ধান মেলে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এখানে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। এটি কোনো পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। কোনো কিছু গ্রহণ করার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। অন্যথায় আমরা কোনো মতেই দায়ী থাকবো না। |
👉 স্বাস্থই সম্পদ: Click Here
আরও পড়ুন:
লেবু জল খাওয়ার উপকারিতা