কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

কিডনি ড্যামেজের ১১ টি লক্ষণ: এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

কিডনি আমাদের শরীরে একটি ছাকনির মতো কাজ করে। আমাদের শরীর থেকে ফিল্টার করে ময়লা বের করে দেয় এই অঙ্গটি। আর এই ছাকনি যদি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাহলে আমরা খুব দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পরতে পারি।
তাই আমাদের কিডনি সবল ও সচল আছে কিনা সেই দিকে আমাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে। কিডনি ড্যামেজ হওয়ার আগেই আমাদের শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। যা দেখে আমরা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আমাদের কিডনিকে ঠিক সময়ে সারিয়ে তুলতে পারি। এখানে আমরা কিডনি ড্যামেজের ১১ টি লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো।

১. অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়া:

কিছুটা দূর হাঁটতে বা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে হঠাৎ ক্লান্ত হয়ে পড়লে বুঝবেন আপনার কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে না। আমাদের কিডনিতে বিষাক্ত পদার্থ জমা হওয়ার কারণে এই রকমটা হতে পারে। তবে শুধু কিডনি খারাপের জন্যই ক্লান্ত হয়ে পড়ি তা নয়। অনেকসময় রক্তাল্পতা বা দুর্বলতার কারণেও অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তি আসে।

২. ঘন ঘন প্রস্রাব:

ঘন ঘন প্রস্রাব করাটাও কিডনি রোগের লক্ষণ। কিডনির ফিল্টার করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেই ঘনঘন প্রস্রাব করতে হয়। কখনও কখনও এটি পুরুষদের মূত্রনালীর সংক্রমণ বা বর্ধিত প্রস্টেটের লক্ষণও হতে পারে।

আরও পড়ুন: আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

৩. প্রস্রাবের সাথে রক্ত নির্গত হওয়া:

একটি সুস্থ কিডনি সাধারণত প্রস্রাবের সাথে রক্তে থাকা বর্জ্য বের করে দেয়। আর কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেলে প্রস্রাবের রক্তকণিকা বের হতে থাকে। সাধারণত কিডনির পাথর, ইনফেকশন হয়ে থাকলে এই সমস্যা দেখা দেয়।

৪. প্রস্রাবে ফেনা:

প্রস্রাবে অনেক বেশি ফেনা দেখা দিলে বুঝতে হবে যে প্রস্রাবের সাথে অনেক বেশি প্রোটিন বের হয়ে যাচ্ছে। প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নামক প্রোটিনের উপস্থিতির জন্যই এমন হয়। এটিও কিডনি ড্যামেজের একটি লক্ষণ।

৫. গোড়ালি বা পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া:

পায়ের পাতা বা গোড়ালিতে ফোলাভাব থাকাটাও কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে কিডনিতে সোডিয়াম জমা হয়, যার ফলে পায়ের পাতা এবং গোড়ালি ফুলে যেতে পারে।
তবে এই ফুলে যাওয়া হৃদরোগ, লিভারের রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী পায়ের শিরার সমস্যারও লক্ষণ হতে পারে।

৬. প্রস্রাবের সময় ব্যথা:

প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া কিডনি সমস্যার আর একটি লক্ষণ। মূলত প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালা-পোড়া এগুলো মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ। এই সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে জ্বর ও পিঠের পিছনে ব্যথা অনুভূত হয়।

৭. খাবারে অরুচি:

বিভিন্ন কারণে খাবারে অরুচি হতে পারে। কিন্তু একটু ঘন ঘন অরুচি হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়াকে অবহেলা করবেন না। শরীরে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হওয়ার কারণে এই ধরণের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এতে কিডনি ড্যামেজও হতে পারে।

আরও পড়ুন: তুলসী পাতার উপকারিতা

৮. শুষ্ক ত্বক এবং চুলকানি ভাব:

কিডনি একদিকে যেমন আমাদের শরীরের অবাঞ্ছিত পদার্থ বের করে দেয় অন্যদিকে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনেও সহায়ক। যার ফলে হাড় মজবুত হয় এবং আমাদের রক্তে সঠিক পরিমাণে খনিজ পদার্থ বজায় থাকে। কিন্তু কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেলে লোহিত কণিকার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার প্রভাবে আমাদের ত্বকে শুষ্কতা ও চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়।

৯. ঘুমের সমস্যা:

কিডনি আমাদের শরীরে ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। এটি আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। রাতে ঘুমের সমস্যা হলে সেটা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের লক্ষণও হতে পারে।

১০. চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া:

যখন প্রস্রাবের সাথে বেশি পরিমাণে প্রোটিন বের হয়ে যায় তখন চোখের চারপাশ ফুলে যায়। এই সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

১১. মাংস পেশীতে টান:

ইলেক্ট্রোলাইট উপাদানের ভারসাম্যহীনতার কারণে কিডনির সমস্যা হয়ে থাকে। আর এই উপাদানটি কমে গেলে মাংস পেশীতে টান ও খিঁচুনির সমস্যা দেখা দেয়।

আরও পড়ুন : থানকুনি পাতার উপকারিতা

কিডনি ভালো রাখার উপায়:

১. দৈনিক ৩-৪ লিটার জল পান করুন।
২. প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখবেন না।
৩. মাদক নেশা থেকে দূরে থাকুন।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৫. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বন্ধ করুন।
৬. নিয়মিত ব্যাথা নিরোধক ওষুধ গ্রহণ করবেন না।
৭. প্রতিদিন শরীরচর্চা বা মর্নিং ওয়াক করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৮. কোল্ড্রিংকস জাতীয় পানীয় বেশি খাবেন না।

আরও দেখুন: বয়স ক্যালকুলেটর

সুস্থ কিডনির ৫ টি লক্ষণ:

১. স্বাভাবিক রক্তচাপ
২. সারাদিনে ৬ থেকে ১০ বার প্রস্রাব করা
৩. চর্মরোগবিহীন মসৃণ-উজ্জ্বল ত্বক
৪. রক্তে হিমগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকা
৫. সময়মতো খিদে পাওয়া, জল তেষ্টা পাওয়া, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে না পড়া।

আরও পড়ুন: পেটের মেদ কমানোর উপায়

FAQs: Frequently Asked Questions

১. কিডনির ব্যথা কোথায় হয়?

উত্তর: কিডনিজনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাম পাশে হয়। পেছনের পাঁজরের নিচের অংশে কিডনির ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা থেকে থেকে আসে, শোয়া-বসা বা কোনো কিছুতেই এই ব্যথা থেকে আরাম মেলে না।
এছাড়াও, মূত্রনালীতে ব্যথা অনুভূত হয়।

২. কিডনি পাথর গলায় কোন খাবার?

উত্তর: কিডনি পাথর গলানোর জন্য পাতি লেবুর রস মিশ্রিত জল, তুলসী পাতার রস, ডালিমের রস, মেথি বীজ, কালো জিরা খুব কার্যকরী। তবে এগুলি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

৩. কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবে না?

উত্তর: কিডনিতে পাথর হলে মাংস, আমন্ড-কাজু বাদাম, পালং শাক, টমেটো, চিনি, ফ্যাট জাতীয় খাবার, নুন, কম খেতে হবে।

Disclaimer:
এখানে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। এটি কোনো পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। কোনো কিছু গ্রহণ করার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

👉 স্বাস্থই সম্পদ: Click Here

আরও পড়ুন: আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

👉 Subscribe Our YouTube Channel: Click Here

Leave a Comment

close

You cannot copy content of this page